নদী ও বিষণ্ণ পথচলা

সব নদীর পাশেই হেঁটে যায় কিছু পথ
প্রিয়ংবদ হাসির মতো।
সেইসব পথ আপাত উচ্ছল
নিভৃতে যার বেদনার অতল।
কেউ খুঁজে দেখে না!
কিছু চলা কী অদ্ভুত বিষণ্ণ শোকে,
অবিরাম। কখনও ছোঁয় না
প্রেমময়ী জল সমান্তরাল।
অথচ তৃষ্ণাটুকু তো মিথ্যে নয়!
কিছু চাওয়া কেবল রক্তাক্তই হয়
সাধের পৌন:পুনিক মৃত্যু নিয়ে।
কেইবা বুঝে!
সব নদীর পাশেই
হেঁটে যায় ভারাক্রান্ত পথিক।
হেরেই যায় অবিরাম।
তবুও পথচলা থামে না।

এ আমি কে আমি?

এ হয়তোবা আমি নই
ছিলামই না কখনও এমন আমি!
স্বপ্নোত্থিতের মতো জেগে উঠি;
আমূল হারিয়ে ফেলি বেভুল মন
ত্রাসে জিজ্ঞাসি –
কে তুমি, কে তুমি, কে তুমি?
এ নিশ্চয় আমি নই!
এই সমস্ত ছোটাছুটি, ব্যস্ততার মহাযজ্ঞ
এই নিরেট পাষাণ, বোধহীন মগ্ন
এই সমস্ত সুকুমার অনাদর
এ আমি নই, এ আমি নই!
স্বপ্নোত্থিতের মতো জেগে উঠি;
বিষাদে ভরে বোধের আক্রান্ত প্রহর।
এ আমি নই, আমি নই
জানি না কে আমি?
কোথা থেকে এসেছি, যাবইবা কোথায়?
এইসব ছেঁদো ঠিকানা আমার নয়;
এইসব অর্থহীন যাপনও আমার নয়!
স্বপ্নোত্থিতের মতো জেগে উঠি;
এ আমি কে আমি?

গল্পঃ বোয়াল এবং দুইয়ের পরে সাতটা শূন্য

মি চৌধুরি, আপনি আর না করবেন না। এই সামান্য উপহারটা নিয়ে নগণ্য এই বান্দার অশেষ উপকার করেন।

বোয়াল মাছের মতো মুখ। একটা হোঁৎকা লোক রাজ্যের তেল মুখে এনে বিশ্রী ভঙ্গীতে হেহে করে হেসে যাচ্ছে।

অফিস থেকে অদূরে একটা ক্যাফেতে ডেকে এনেছে লোকটা। প্রভাবশালী লোক হাজি ইদ্রিস আলি। ইতোমধ্যে বেশ কবার কিছুটা রুঢ়ভাবেই একটা প্রকল্পের ঠিকাদারি পাইয়ে দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু শেষবারে এই বোয়াল মাছ নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বলেছে – ঐ স্টার ক্যাফেতে আসেন। নির্দোষ কথার মধ্যেও প্রচ্ছন্ন হুমকি থাকতে পারে। এই স্তরের মানুষেরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সবকিছুই জায়েজ মনে করে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও শান্তনুকে আসতে হয়েছে। আবার এক ধরনের বিধ্বংসী রোখ। শেষ দেখে ছাড়ার। তা শেষই হয়েছিল বটে।

হাজির অর্ডার করা লাচ্ছি ছুঁয়েও দেখে না!

দেখুন হাজি সাহেব, আপনাকে কতবার বলব একই কথা। আপনি নিয়মমতো বিড করে আসুন। আপনাকে আলাদা সুবিধা দেয়া অন্যায়। এ আমি পারব না।

ইদ্রিস আলি বিচলিত হন না। মুখে মধু ঢেলে বলেন, ভাইসাব লাচ্ছি খান। দুইশত টাকা খরচ করেছি। লাচ্ছির সাথে মন কষাকষি কইরা লাভ নাই।

শোনেন ভাইসাব, আল্লাহপাকের এই দুনিয়ায় সবই কেনা যায়। আপনার প্রাইসট্যাগটা জানি না। তবে মনে হয় অনুমান করতে পারি। দুইয়ের পরে সাতটা শূন্য হলি পরে চলবে?

লাচ্ছির ঠান্ডা গ্লাসটার মতো ঘামতে থাকে শান্তনু। এই দুর্মূল্যের বাজারে দুইয়ের পরে সাতটা শূন্য? সিমিন্তি রহমানকে একান্ত আপন করে পেতে ঘর, ধর্ম আর বিত্তশালী পরিবার সবকিছু এককথায় বিসর্জন দিয়ে এসেছে। দুইয়ের পরে সাতটা শূন্য? বড্ড নার্ভাস মনে হয়। উচ্চাভিলাষী সিমিন্তির বায়নাক্কা মেটাতে ক্লান্ত শান্তনু থরথর করে কাঁপতে থাকে। অধ্যাপক ডা. নিরঞ্জন চৌধুরির পুত্র শান্তনু চৌধুরি বিকিয়ে গেল।

হাজি ইদ্রিস আলি সন্তুষ্টিতে ঘোঁত করে উঠে লাচ্ছিতে চুমুক দেন।

অবিকল একটা বোয়াল মাছ যেন। বিরাট হাঁ করে গিলে নিলো শান্তনু চৌধুরিকে যে কিনা কোনো প্রলোভনে বিকোয় না! দুইয়ের পরে সাতটা শূন্য! ইদ্রিস আলি এতক্ষণে একটা প্রকান্ড বোয়াল হয়ে গিয়েছেন। এই তো ধারালো দাঁত দেখা যাচ্ছে। টপাটপ বসে যাচ্ছে শান্তনুর অস্তিত্বে … খুব মন্থর গতিতে … যেন এর শেষ নেই … রক্তাক্ত শান্তনু ধীরে ধীরে ঢুকে যাচ্ছে বিরাট গ্রাসে।

এমন কি হয় না?

এমন কি হয় না?
ভালোবাসাবাসি থাকুক,
নিয়ম করে রক্তও ঝরুক
শুধু হাত বাড়ালেই পাওয়া না হোক।
প্রকৃতি যে জানে সব প্রাপ্তির বুকে
লুকিয়ে থাকে বিকর্ষণের দুরারোগ্য ভাবনা!
এমন হয় তো হোক
দূরত্বেই বাড়ুক গভীর প্রণয়
লেখা থাক সেইসব অনন্য মামুলি কথা
আকাশের ঠিকানায় হোক বাঙময়।
আর কল্পনার ঠোঁটে এঁকে যাক
বিনিদ্র রজনীর নিবিড় চুম্বন।
শুধু স্পর্শের উষ্ণতা অধরা থাক।
এ মন জানে অপ্রাপ্তিই শুদ্ধ সুর
অপার প্রেমে ভরে ভরুক দুপারের বুক।
এমন কি হয় না?
পেরিয়ে গেল দুটি প্রাণ
আপন আপন বাস্তবতার অনতিক্রম্য বৃত্ত!
অসম্ভবের ঊর্ধে শুধু হৃদয়বলই
বুঝিবা শাশ্বত সত্য।

গল্পঃ স্বীকারোক্তি

বাইরে বেরিয়েই মনে হলো বিরাট ভুল হয়েছে।

কনকনে শীতের ভোরে প্রচণ্ড মনোবল না থাকলে বের হওয়াটা মুশকিল। সেই অসাধ্যটাই অনায়াসে সাধন করে জামান। বহুদিনের অভ্যাস ভোর সাড়ে চারটায় আড়াই মাইল দৌড়ানো। কমও না, বেশিও না! জামানের সবকিছুই মাপা। আজকেও এর অন্যথা হয়নি।

তবে এখন শীতের সাথে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়াতে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। জিনি বলেছিল – আজকে যেও না। একদিন না দৌড়ালে কী হয়? আবার গলায় অদ্ভুত মাদকতা ঢেলে কীভাবে যেন চেয়ে ছিল, তাতে জামানের রুটিন ভেস্তেই গিয়েছিল প্রায়। কোনো মানে হয় এর? এভাবে লক্ষ্যচ্যুত করার অপচেষ্টা!

কিন্তু না, সে অভ্যাসের দাস। যা করার তা করতে হবেই। মধ্য তিরিশে শরীরটাকে সচল রাখা খুবই জরুরি।

পথটা একটু উঁচুনিচু। খাড়াতে শুরু করে ঢালু হয়ে গিয়ে আবার আবার উঁচু হয়ে গিয়েছে। জায়গাটা একটু বিরানই বলা যায়। জনবসতি তুলনামূলক কম। বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে বন। তার ভেতর সরু রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে। জামান অবশ্য প্রধান সড়ক ধরেই দৌড়ায়। খামোখা রাতবিরেতে বনের অন্ধকারে যাবার দরকারটা কী?

হাপ হাপ হাপ … দৌড়ে চলেছে। কানের মধ্যে এয়ারপডে ক্লাসিকাল মিউজিক লা কোয়াত্রো স্টাজিওনি… গায়ে আলো প্রতিফলক ভেস্ট সাঁ সাঁ করে ছুটে চলা যানবাহনের হেডলাইটের আলোয় ঝলসে উঠছে বার বার। এই রাস্তায় এতবার দৌড়েছে যে ঘড়ি না দেখেই আন্দাজে বলতে পারে কতটুকু গেল আর কিছু ল্যান্ডমার্ক তো আছেই। যেমন, চার্চটা দেখলেই বলতে পারে আর নয় মিনিট গেলেই ফিরতি দৌড় শুরু করবে।

এখন যেমন মনে হচ্ছে চার্চটা দেখতে পাবার কথা। কিন্তু কোনো চার্চের দেখা মিলল না! ভুল হচ্ছে জামানের? হতেই পারে। বৃষ্টির কারণে হালকা ধোঁয়াশা রাস্তার ওপর। অনুমানে ভুল হতেই পারে। লজিকাল! মনে মনে তাই ভেবে চলাটা জারি রাখল।

বেশ খানিকটা সময় পার হবার পর মনে হলো – ইটস এনাফ! কী যেন একটা ভুল হচ্ছে। এতক্ষণ তো লাগার কথা না! চার্চ কই? ভোজবাজির মতো হাওয়া হয়ে গেল! একটু থামল। না, আর যাওয়া সম্ভব না। ফিরতে হবে। একটা শাওয়ার নিয়ে নাশতা করে জীবনযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি! খালি দৌড়ে গেলে তো চলবে না। নিত্যদিনের কাজগুলি কে করবে, হ্যাঁ?

থামতেই খেয়াল হলো জায়গাটা অপরিচিত। অথচ এরকম তো হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সোজা প্রধান সড়ক ধরে যাওয়া। এতে ভুল হবার কী আছে? আশ্চর্য! রাতের অন্ধকারে অবশ্য পরিচিত জিনিসও অপরিচিত লাগে। চারপাশে বাড়িঘর এখনও খুব একটা নেই। শুধু একটামাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানে টিমটিমে আলো জ্বলছে।

বৃষ্টির তোড় বেড়েছে। জঘন্য ইংলিশ ওয়েদার! কোথাও থামা উচিত নইলে পুরোটাই ভিজে যাবে। পানির পিপাসাও পেয়েছে। অভ্যাসের দাস কী করে জানি আজ পানির বোতলটাই নিতে ভুলে গেছে। জামান অনিচ্ছাসত্ত্বেও দোকানটাতে ঢুকে গেল। কিছু দোকান চব্বিশঘন্টাই খোলা থাকে। একটা পানির বোতল কিনতে হবে।

শরীর হঠাৎ খারাপ লাগছে। মাথায় অসহ্য একটা ভোঁতা যন্ত্রণা। হয়তো ঠান্ডা আর বৃষ্টির যুগপৎ ফলাফল। একটা প্যারাসেটামলের বাক্স আর একটা পানির বোতল নিয়ে কাউন্টারে দাঁড়াতে দেখতে পেল কেউ নেই সেখানে। মানেটা কী?

আবার একটা বেল আছে দেখা যায়। জামান অধৈর্য হয়ে বেলটা চাপল।

ছিপছিপে থেকে এখন বেশ প্রবল বেগে বর্ষণ শুরু হয়েছে। হঠাৎ মেঘের গর্জন শোনা গেল। সাথে বিদ্যুৎ চমকে উঠল। খুবই অবাক হয়ে গেল জামান। শেষ কবে এরকম দেখেছিল মনে করতে পারল না। এপাশে দোকানদারের কোনো পাত্তা নেই। অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী? অবশ্য এই ঝড়জলে যাবেইবা কোথায়!

হঠাৎ দেখতে পেল কাউন্টারের পেছনে দেয়ালে একটা ছোটো চৌকোণা দরজা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে খুলে গেল। সেটা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তরুণী দেখতে এক মেয়ে এগিয়ে আসছে। কী হচ্ছে এসব? দোকানের মিটমিটে আলোটা কমতে কমতে মোমবাতির আলোর মতো হয়ে গেল যেন। সহসাই একটা অযৌক্তিক অস্বস্তিতে মেরুদন্ডটা শিরশির করে উঠল।

জামান খুবই ধীরস্থির শান্ত প্রকৃতির। অভ্যাসের বাইরে অযৌক্তিক কিছু তার নিত্যদিনের দিনযাপনে পাত্তা পায় না। সেখানে এইরকম পরিবেশে এক তরুণীকে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে দেখে প্রথমে চমকে গেলেও সামলে নিলো। একটু কেশে জিজ্ঞেস করলো – আপনার কি কোনো সমস্যা, মিস? এভাবে চার হাতপায়ে চলছেন কেন?

কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। কিন্তু ধীরে ধীরে মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। মুখের সামনে লম্বা টান টান চুলের রাশি। জাপানি মুভিতে দেখা অশরীরীর মতো। নিভু নিভু আলোতে ছমছমে একটা দৃশ্য। কিন্তু জামান শক্ত ধাতের মানুষ। এই ভোরে এমন পরিবেশে এরকম রঙবাজিতে সে যারপরনাই বিরক্ত হয়ে গেল। একটা খিস্তি বেরিয়ে গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু মেয়েদের তো তা বলা যায় না। তাই বেমালুম গিলে ফেলল। কিন্তু বিকৃতমুখে বলল, এরকম ফাজলামির মানে কী? আমি এই দুইটা জিনিস কিনতে চাই। আপনার সস্তা রসিকতা দেখার কোনোই মানসিকতা নাই আমার।

মেয়েটি চুল সরিয়ে খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ল। হাসিটা খুব চেনা ঠেকল। টকটকে গৌরবর্ণের জিনিকে না চেনার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু জিনি এখানে কেন? ওর তো বাসায় থাকার কথা। হঠাৎ একটা কিছু মনে হওয়াতে মাথাটা দুলে উঠল। বাইরে ততক্ষণে তুমুল ঝড় শুরু হয়েছে। কিন্তু জামানের তাতে ভ্রূক্ষেপ নাই। সে দিগ্বিবিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দোকান থেকে বেরিয়েই প্রাণপণে দৌড়ানো শুরু করল। এ ভোরের জগিং না, রীতিমতো প্রাণভয়ে দৌড়।

মাথা কাজ করছে না। অনাস্বাদিত একরকমের চূড়ান্ত ভয়ে সে বনের মধ্য দিয়েই দৌড়ানো শুরু করল। বনের আঁকাবাঁকা পথ। আলো একদম কম। বৃষ্টির কারণে পচা পাতায় চলা কঠিন হয়ে গেছে। তবুও দ্রুততায় পা ফেলছে। পিছলে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। তখনই সেই খিলখিল হাসিটা আবার শুনতে পেল। গা হিম করা হাসি। জামানের বুকের ধুকপুকানি প্রচণ্ড বেড়ে গেল।

যে বেগে চলছে তাতে এতক্ষণে বনটা পেরিয়ে বাসার রাস্তাটা পেয়ে যাবার কথা। কিন্তু বনটা পেরোনো গেল না। আবছায়া অন্ধকারে বুঝতে পেল কিছু একটা ওকে অনুসরণ করছে। পাশে ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পেল একটা চিতার মতো চারহাতপায়ে তাড়া করে আসছে জিনি। মুখে সেই গা হিম করা চাপা হাসি।

জামানের পক্ষে আর এসব নেওয়া সম্ভব হলো না। পচা পাতায় পিছলে পড়ে গেল বনের রাস্তায়। বোধহয় পা ভেঙে গেল। চিৎ হয়ে দেখতে পেল বড়ো বড়ো গাছেরা প্রবল হাওয়ায় মাথা ঝাঁকাচ্ছে। ভঙ্গীটা অনেকটা শাসাবার মতো। চিতার মতো চলা জিনি অদূরেই দাঁড়িয়ে। মুখে অতলান্ত আক্রোশ!

জামান শেষমেশ চেঁচিয়ে উঠল, ওকে আই গিভ আপ! মোবাইলটা বের করে স্থানীয় পুলিসে কল দিলো।

জামান যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে ফেলেছে। কিন্তু মুখে এক করুণ হাসি। আমাকে ক্ষমা করো, জিনি।

জিনির মুখটা নরম হয়ে যায়। আক্রোশ আর তাতে থাকে না। কেবল অস্ফুটে বলে, আমি কী দোষ করেছিলাম? মিথ্যে সন্দেহের বশে রাগের মাথায় আমাকে মারতে পারলে তুমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম, জামান।

কর্তব্যরত অফিসার একটা নরহত্যার স্বীকারোক্তির বিবরণী লিখলেন। সংক্ষেপে যা দাঁড়ায় –

“৩১ অক্টোবরে ৩১ পেমব্রোক রোডে মি জামান শরীফ সজ্ঞানে চারটা নয় মিনিটে জিনি মিথিলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পর রোজকারের মতো মি শরীফ প্রাতকালীন দৌড়ে বেরিয়ে যান। সেখানে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে গ্রোভউড বনের ভেতর দিয়ে যাবার সময় পিছলে পড়ে পা ভেঙে ফেলেন। অতঃপর ভোর পাঁচটা নয় মিনিটে ফোন দিয়ে নিজের স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন … ”

গল্প : নীলাদ্রির নীল শার্ট

গল্পঃ নীলাদ্রির নীল শার্ট

আচ্ছা নীলভাই, আপনি সবসময় একরকমের শার্ট পরে আসেন কেন?

ঝা চকচকে অফিসে আধাস্বচ্ছ কাচের কিউবিকলের পার্টিশানের উপর দিয়ে গলাটা উটপাখির মতো উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে সুমন। এরকম লাগোয়া দশ বারোটি ওয়ার্কস্পেসের মধ্য থেকে চাপা হাসির শব্দ শোনা গেল।

নীলাদ্রি হাবিব ওরফে নীল কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও সামলে নিলো। বেশ বুঝে যে তাকে নিয়ে পিছনে হাসাহাসি চলে। তা হাসতেই পারে। কিউবিকলের দেয়ালে স্টিলের আবরণ পরানো। সেখানে দিব্যি চেহারা দেখে নেওয়া যায়। নীল তাই করল।

পুরাই গোবেচারা চেহারা। মুখটা সুদর্শন হতে হতে কোনো এক অজানা কারণে কেঁচে গিয়ে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। হালকা গোঁফ আছে। মাথার চুলগুলি চূড়ান্ত শত্রুতা করে তেল দিয়ে নেতিয়ে পড়া পাটতন্তুর মতো চাঁদিতে শুয়ে আছে। অথচ দশ-বারো বছর সে তেলই দেয়নি!

সুমন উৎসুক মুখে এখনও উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। কিছু মানুষ চূড়ান্তরকমের বুলি হয়। এরা ভাব দেখায় খুব নির্দোষভাবেই বলেছে। আর জানাটা তাদের জন্য খুবই জরুরি এমনকি কাজ ফেলে হলেও। নীলাদ্রি সবই বুঝে কিন্তু কিছু বলে না।

মুখে একটা জুতসই উত্তর চলে এলো। কিংবা চ্যাঙড়া ছেলেটাকে কষে একটা ধমক মেরে নিজের চরকায় তেল দেওয়ার কথা মনে হতে থাকল। কিন্তু কিছুতেই কিছু বলতে পারল না।

বরং সবসময় যা বলে তাই বলে ফেলল। আমার এই একটাই শার্ট রে ভাই। তাই ওটাই পরি। আরও কিছু বলতে যাবে তখনই অফিস বয় এসে বলে গেল বস নীলকে স্মরণ করেছেন।

মি কবিরের ঘরটা অত্যধিক ঠান্ডা। বাইরে অবশ্যই কাঁঠালপাকা গরম। কিন্তু তাই বলে সাইবেরিয়া করে রাখারও মানে নেই কোনো। তিনি একটা টুইডের সুট পরে বসে আছেন। খুবই বিসদৃশ দৃশ্য।

নীলাদ্রি, বসো চেয়ারে আরাম করে। নীলাদ্রি তাই করল।

বস, কিছু বলবেন?

আরে, সিরিয়াস কিছু না। তোমাকে যে প্রজেক্টের কাজ দিয়েছিলাম, তা তুমি এত পারফেক্টলি করেছ যে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি। তুমি নিশ্চিত যে আগে এ ধরনের কাজ করোনি?

সব তো আমার সিভিতেই লেখা আছে। কাঁচুমাচু হয়ে বলল নীল।

হ্যাঁ, সে সবই আমি জানি। এনিওয়ে, অ্যামেইজিং ওয়ার্ক, ইয়াংম্যান!

মি কবির উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন। কাঁপা কাঁপা হাতে নীলাদ্রি হ্যান্ডশেক করল।

কংগ্রাচুলেশনস! আমি ভাবছি তোমাকে প্রজেক্ট হেড করে দেবো শীঘ্রই।

নীলাদ্রি এতটাই অবাক হয়ে গেল যে এরকম পরিস্থিতিতে যে ধন্যবাদ দিতে হয় সেটিই বেমালুম ভুলে গেল। কবির সাহেব মানুষকে চমকে দিতে ভালোবাসেন। নীলাদ্রির ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অবস্থাটা খুব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন।

যাহোক, এখনই হবে না। তিনমাস পরে করে দেবো। তবুও আই অ্যাম প্রাউড টু হ্যাভ ইয়ু ইন মাই টিম।

অনেক ধন্যবাদ, স্যার। বহুকষ্টে বলতে পারল নীল। আমি এখন তাহলে আসি।

মিনি সাইবেরিয়া থেকে বের হয়েই যাচ্ছিল তখন হঠাৎ কবির বললেন, আচ্ছা যদিও ইটস নান অব মাই বিজনেস, তোমার কি একটাই শার্ট? যদি কিছু ফাইনানশল হেল্প লাগে আমি বলে দিচ্ছি অগ্রিম কিছু নিয়ে যেও। হতেই পারে এরকম। আশা করি কিছু মনে করবে না!

নীলাদ্রি বেশ লজ্জা পেল। শার্টের ব্যাপারটা বস পর্যন্ত চলে গিয়েছে! কিন্তু শার্ট তো সে পরিবর্তন করতে পারবে না। কোনোভাবেই না! কী আতান্তরে পড়া গেল রে বাবা!

কোনোমতে মৃদুস্বরে বলল, আচ্ছা স্যার। লাগলে জানাব। অনেক ধন্যবাদ।

শার্টের ব্যাপারটা ক্রমশই সবার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এটা একটু উদ্বেগের ব্যাপার। আজকে তিনমাস ধরে এ অফিসে কাজ করছে। প্রতিদিন একই পরিচ্ছদ পরলে মানুষের দোষ দেওয়া যায় কি? আবার কে, কী পরল, তাতে মানুষের এত মাথাব্যথা কেন? এমন তো নয় যে সে ময়লা শার্ট পরে। তাছাড়া সেটি বেশ সুন্দর দামী তন্তুর। হাফহাতা। কিন্তু একইরকম প্রতিদিন। উইথআউট ফেইল! একঘেয়েমি বলেও তো একটা ব্যাপার মনুষ্যসমাজে আছে!

মধ্যাহ্ন বিরতিতে ক্যান্টিনে একাই খাচ্ছিল নীলাদ্রি। খুব সাধারণ খাবার। ভাত আর বেলেমাছের ভুনা। আর একটা ভর্তা। তখন কোত্থেকে জানি অর্ণা এসে হাজির। মেয়েটা বয়সে কাছাকাছিই হবে। বিচিত্র এক কারণে তার মতো নির্জীব প্রাণিকে এই দারুণ মেয়েটি কিছুটা হলেও পাত্তা দেয়। সেটি কৌতুক, কৌতূহল নাকি স্রেফ কাজের জন্য – কে জানে কী?

বসতে পারি?

বসুন। একটা অসহ্য গদগদ ভালোমানুষি মুখে উত্তর দেয় নীলাদ্রি। পিত্তি জ্বলে যায় অর্ণার। কেন জানি মনে হয় এই নীলাদ্রি হাবিবের (ওরফে নীল হাবা সুমন গং -দের দেওয়া উপনাম) কিছু একটা রহস্য আছে। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সাধারণত প্রবল হয়। এই মেয়ের সেটি একটু বেশিই।

কী খাচ্ছেন?

এই সামান্য মাছ-ভাত। এমন কিছু না।

রঙ দেখে তো খুব ভালো মনে হচ্ছে। কে রেঁধেছে?

আমিই রান্না করি। মেসে থাকি।

ওফ, তাহলে তো দারুণ হবে। আগেও আপনার রান্নার স্বাদ নিয়েছি।

হ্যাঁ, ঐ আরকি!

নীলভাই, কেউ প্রশংসা করলে সৌজন্য করে বলতে হয় – আসুন একসাথে খাই!

নীল জিভ কেটে বলে – সরি, সরি! এই ফরিদ, অর্ণা ম্যামকে একটা প্লেট দে তো!

থাক, লাগবে না! অকারণে অর্ণার মন খারাপ হয়ে যায়। প্রচণ্ড রাগ হয়। শ্যামবর্ণের নাকে অভিমানের স্বেদবিন্দু জমতে থাকে। কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ! কোনো মানে হয় এর? হাবা হাসমতটা আবার তাকিয়ে আছে নাওয়া-খাওয়া ভুলে। কই পালায় সে?

বিকেল পাঁচটায় অফিস ভেঙে গেলে নীলাদ্রি বাসের জন্য হন্তদন্ত হয়ে রওনা হবার প্রস্তুতি নেয়। লিফটের কাছে চলে আসে। তখনই হঠাৎ হ্যাঁচকা টানে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায় অর্ণা।

একদিন সিঁড়ি দিয়ে গেলে কিছু হয় না। আসেন আমার সাথে। নীলাদ্রি কিছু বলার সুযোগই পেল না। তড়িঘড়ি নেমে একটা রিকশা ডেকে কাছের একটা ক্যাফেতে নিয়েই তবে দম ছাড়ল।

ব্যাপার কী, কিছুই বুঝতে পারছি না।

আজকে আপনার জন্মদিন ছিল। কই একবারও তো বললেন না, নীলভাই!

নীল খাবি খেলো। এ কী আর এমন বলার? এই বিচ্ছুপূর্ণ অফিসে বলে লাভটাইবা কী? তাছাড়া জন্মদিন ঘটা করে পালন করার ব্যাপারটাই নেই ওর মধ্যে।

আমি তো জন্মদিন পালন করি না। আসলে কেউ কখনও করেনি! বলা ভালো, কেউ কেয়ার করে নাই!

চুপ করো, হাবা কোথাকার! ধমকে ওঠে অর্ণা! কেউ করে নাই তো কী হয়েছে? আমি করব। একশবার করব। কী করবা? কখন যে তুমি বলে ফেলেছে খেয়াল হয় না!

নীলাদ্রি আমতা আমতা করতে থাকে। কী মুশকিলে পড়া গেল এই দস্যি মেয়েটাকে নিয়ে!

অর্ণা ততক্ষণে একটা কাপকেকে আঙুলসমান একটা মোম ধরিয়ে রীতিমতো আদেশ করল, ফুঁ দাও!!

এই মধুর আদেশ অমান্য করে কার এমন বুকের পাটা!

অতঃপর একটা প্যাকেট নীলাদ্রির হাতে ধরিয়ে দিলো।

কী এটা? জিজ্ঞাসুমুখে চেয়ে রইল।

তোমার মাথা! যাও, এটা পরে আসো।

নীলাদ্রি দেখল প্যাকেটে এক জোড়া শার্ট। বেশ সুন্দর। ক্ষণিকের জন্য আবেগে আপ্লুত হয়ে অর্ণার হাতটা ধরে ফেলেছিল প্রায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে ফেলে। নীল শার্ট বাদে তো আর কিছু সে পরতে পারবে না! পরা সম্ভব না! কিছু একটা ভেবে মুখটা পাংশু হয়ে যায়।

অর্ণা, উইশের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি এই উপহার গ্রহণ করতে পারব না!

অর্ণা বড়ো অবাক হয়ে যায়। কেন পারবে না?

তুমি বললেও কিছু বুঝবে না। আমার অন্য কিছু পরার জো নেই!

দারুণ মন খারাপ হয়ে যায় অর্ণার।

জানি, ভালো কিছু দিতে পারিনি। বাড়িতে আমিই একমাত্র উপার্জন করি। তিনটা ভাইবোন, মা আর পক্ষাঘাতগ্রস্থ বাবাকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। অর্ণার চোখে জল। সেটা ঢাকার একটুও চেষ্টা করে না এবারে।

না, সেটা নয়। নীলাদ্রি শেষবারের মতো চেষ্টা করে। মেয়েটা তাকে ইমোশনের জালে জড়িয়ে ফেলছে তিরবেগে। অর্ণার নির্দোষ ইচ্ছের কাছে ধীরে ধীরে পরাজিত হয়ে যাচ্ছে সে।

পাঁচ মিনিট অসহ্য নীরবতায় কেটে গেল। ক্রন্দনরত কোনো নারীকে উপেক্ষা করা সোজা কথা না! স্বয়ং ইশ্বরও বোধ হয় হেরে যাবেন। ঝটিতে প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল নীল। তবে একটা শর্ত দিলো। যদি কোনোরকম অঘটন ঘটে, তাকে যেন আবার নীল শার্টটা দেওয়া হয়।

আবার রওনা হয়েছে ওরা। গন্তব্য এবারেও বলে নাই অর্ণা। মেয়েটার মুখে দিগ্বিজয়ীর হাসি। অফহোয়াইট শার্টে বেশ ভালো দেখাচ্ছে নীলকে।

কী যেন একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে। যথেষ্ট হ্যান্সাম লাগছে আগের ক্যাবলাকান্ত ভাব কেটে গিয়ে। অসামান্য সুন্দর অর্ণার পাশে যোগ্যতর সঙ্গীর মতোই দেখাচ্ছে। কিন্তু নীলাদ্রির ব্যক্তিত্বে একটা পরিবর্তন এসেছে। একটু রুক্ষ কিংবা একটু অহংকারি অথবা উভয়েই কথাবার্তায় চলে এসেছে। সি এন জি ওয়ালা একটু উনিশবিশ ভাড়া চাওয়াতে প্রায় মারতে গিয়েছিল। এমনভাবে দেখছিল যেন নর্দমার একটা কীট অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে। অর্ণা এমন নীলাদ্রিকে চেনে না। কিছুটা ভয় ভয় করতে লাগল। অতি তীক্ষ্ণ দখলদারী ব্যক্তিরা যেমন হয়। অর্ণার বাবাও এমন ছিল। স্ট্রোক করার আগে ওনার অত্যাচারই ছিল একরকম।

একটা রেস্তরাঁয় ঢুকে অবাক হতে হলো। অফিসের সবাই উপস্থিত। সুমন গংরা তো আছেই। সাথে বস মি কবিরও আছেন। যথারীতি টুইডের সুট পরা। সাইবেরিয়ান ঠান্ডা রেস্তরাঁর এসিতে নেই বলে ঈষৎ ঘামছেন।

নীলাদ্রিকে দেখে সবাই খাবিই খেল। এই প্রথম তাকে অন্য কোনো রঙ এর শার্টে দেখা গেল।

সুমন এগিয়ে এলো যথারীতি বাঁকা হাসি নিয়ে।

আচ্ছা নীলভাই, আপনার নীলশার্টটা কই? আমরা তো ভেবেছিলাম আপনার একটাই শার্ট! পেছনে অলিখিতভাবেই হাসির দমক উঠল।

নীল একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর স্পষ্টস্বরে প্রতিটা শব্দ আলাদা করে জোর দিয়ে বলল – সুমন, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো খুবই খারাপ বদভ্যাস। আপনার জিভের মতো যদি মাথাটাও শার্প হতো তাহলে বেশ হতো। একটা রিপোর্টে এত ভুল একটা নবিসও করে না সেখানে তো আপনি বেশ অভিজ্ঞই।

একথায় যেন হাস্যরসে পানি পড়ল। কেউ এভাবে মুখের ওপর বলতে পারে, এটা বোধকরি সুমন ভাবতেই পারেননি! হাতে ধরা গ্লাসটা আরেকটু হলে পড়েই যাচ্ছিল। তোতলাতে তোতলাতে – কী বলতে চান?

ইয়ু হার্ড মি রাইট, মাই ফ্রেন্ড! পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। পিছনে কেউ একজন বলে উঠল, নীলহাবার এ কী হলো রে, সুমন?

সেদিকে তাকিয়ে নীল বলল, আমাকে যে নীলহাবা বলেছ, সামনে আসো। আমার আইকিউ ১৫০। মশার আইকিউ নিয়ে জানি কেউ আসবে না। শক্ত কিন্তু শান্ত চোয়ালে অতলান্ত ঔদ্ধত্য খেলা করতে থাকে। চোখে তাচ্ছিল্যের হাসি। কিছুটা পাগলামিও। জিনিয়াস আর পাগলে চুল পরিমাণ পার্থক্য! অনেকসময় কোনো সীমানাই থাকে না। গ্রে জোনে থাকে।

ঝামেলা দেখে এগিয়ে আসেন মি কবির।

তাঁকে দেখে মুখে একটা বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ফেলে নীলাদ্রি।

এই গরমে টুইডের সুট পরে আছেন কেন? বুঝেছি অক্সফোর্ডে পড়েছেন, সেই হাবভাবে অভ্যস্ত, কিন্তু সেটা এই গরমের দেশে নিতান্ত হাস্যকর, জনাব। খুলে ফেলেন স্যার। আরাম পাবেন।

এমন নীরবতা নেমে এলো যে বলার নয়! সবাই এরকম চাঁছাছোলা কথায় বিস্ময়ে খাবি খেতে থাকল।

হঠাৎ কব্জিতে একটা টান খেলো নীল। অর্ণা হিসহিসিয়ে বলছে – এসব কী আবোলতাবোল বকছ! অনেক হয়েছে চলো চলে যাই।

এই মেয়ে, তুমি আমাকে ফাঁদে ফেলে এখানে এনেছ আরও ফান করতে, আমাকে ছোটো করতে, তাই না? তোমার এই যোগসাজশ আমার বমির উদ্রেক করছে।

এই কথার প্রত্যুত্তরে কী বলা যায়, অর্ণা কিছুই খুঁজে পেল না!

এসবের মাঝে মি কবির হো হো করে হেসে উঠলেন। ইয়ু আর অ্যাবসোলিউটলি রাইট, মাই বয়! এটা খুলেই ফেলি বরং! বড্ড গরম লাগছে! ভেরি উইটি! হাহাহা

অবশেষে সবাই দেখতে পেল হাত ধরে নীলকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে অর্ণা। নীল সমানে কথার তির নিক্ষেপ করে যাচ্ছে।

বেশ কিছুদিন পর…

অনেক অনুরোধের পর সেই ক্যাফতে আসতে রাজি হয়েছে অর্ণা। সামনে বসে আছে মুখ শক্ত করে। নীলাদ্রির পরনে সেই আগের নীল শার্ট।

আমি কিন্তু তোমার দেওয়া অন্য শার্ট পরতে চাইনি! কেন চাইনি, জিজ্ঞেস করবে না?

না, আমার ওসব জিজ্ঞেস করতে আর রুচি নেই! শুনতে চাই না।

আমতা আমতা করে নীলাদ্রি বলল, আমার তো মনে হয় তুমি শোনার জন্য হেঁদিয়ে মরছ। মুখে এক বুকে আরেক। সামান্য হাসল। এই হাসি অর্ণার বুকে গিয়ে ঝাঁকি মারল। জাদুকর নাকি?

আমার যে রূপটা দেখেছ, সেটাই আসল আমি। ঠোঁটকাটা, দাম্ভিক, দখলদারী প্রায় উন্মাদ কিন্তু ইনআরগুয়েবলি জিনিয়াস! হাহাহা। একবার হলো কী, হঠাৎ বেনামে হাফডজন শার্ট কেউ একজন পার্সেল করে আমাকে। দারুণ সুতোর আরামদায়ক নীল শার্ট। কৌতূহলবশত একটা পরেই আমার ভেতরের অদ্ভুত পরিবর্তনটা টের পাই। কিছুটা ক্যাবলা দেখালেও অনেক সংযত। ওতে আমার মেধার একটুও ক্ষতি হয়নি। কেবল কিছুটা বোকাটে দেখতে হয়েছি। বিশ্বাস করো, আমি এতেই ভালো আছি। আগের উদ্ধত জীবনে ফেরত যেতে চাই না। কে দিয়েছে, কী করে এলো আমার কাছে, আমার হাই আইকিউও সে প্রশ্নের উত্তর মেলাতে ব্যর্থ! জগতে কত অদ্ভুত ঘটনাই যে ঘটে!

নীলাদ্রি হাবিব একটানে বলে দম নিলো একটু। ততক্ষণে ওপাশের জন ক্ষেপে উঠেছে।

এই যে জিনিয়াসের বাচ্চা, তুই যে বললি আমি তোকে ফাঁদে ফেলে অপদস্থ করেছি, এত বুঝিস এইটুকু বুঝলি না! মন বুঝিস না, গাধা!

তুমি কিন্তু তুই-তোকারি করছ!

একশবার করব। কী করবি, হাবা?

এইকথায় নীল শার্টের নীলাদ্রি মুচকি হাসি ছেড়ে হো হো হাসিতে ফেটে পড়ল। আর নীল শাড়িতে অর্ণা নীলাদ্রির হাতে হাতখানা নির্বিবাদ সঁপে দিয়ে আরক্ত হয়ে গেল!

গল্প : করিডোর

অনেক রাতই হবে। ঘুম ভেঙে দেখি টেবিলের উপর মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি। রুমে মৃদু আলো জ্বালানো। কম্পিউটারে লিখছিলাম একটা ফরমায়েশি ভূতের গল্প। স্ক্রিনটা নিভে গিয়ে একটা হালকা আভা ঠিকরে বেরুচ্ছে।

এরকম বিশ্রীভাবে ঘুমিয়ে পড়া আমার স্বভাব নয়। আমি, জায়ান চৌধুরি, মোটামুটি নিয়মানুবর্তী ব্যক্তি। রাতে হালকা ইয়োগা না করে কিংবা ব্রাশ না করে টেবিলেই ঘুমানোটা আমার জন্য খুবই আশ্চর্যের!

বিরক্তিতে ভ্রূ কুঁচকে গেল। কয়টা বাজে? দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওখানে ঘড়িটা নাই। কীভাবে সম্ভব? বলতে নাই আমার আবার একটু সুরাপানের অভ্যেস আছে গভীর রাতে। তা আজকে তো ওসবের কিছুই ঘটেনি। কারণ লিখব বলে মনস্থির করেছিলাম। তাই ঘড়িটা না দেখার মতো মনোবৈকল্য অবশ্যই ঘটেনি।

আমার স্ত্রী মণিকা অফিস ট্যুরে গেছে। আমাদের সন্তান নেই। বাসা পুরোটাই ফাঁকা। ঘাড়ে একটা চিনচিনে ব্যথা নিয়ে উঠে পড়লাম। ঘড়ি না থাকলেও রাত যে অনেক হয়েছে তা দেহঘড়ি ঠিকই জেনেছে।

রুম থেকে বেরিয়েই মনে হলো একটা চাপা কোলাহলের শব্দ আসছে লিভিং রুম থেকে। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টটা নিতান্তই সাদাসিধে। আমি প্রায়ই রসিকতা করে বলি – দুই তিনটা বক্স একটা টানেল দিয়ে জোড়া দিয়ে দেওয়া। একবারেই রহস্যহীন। অলিগলির মতো অজানা বাঁক নেই। অবশ্য কথাটা বলেছিলাম মণিকার অসম্ভব দেহজ বাঁকে চক্ষুপাত করে। মনে আছে সেদিনই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অ্যাপার্টমেন্টটা কিনেছিলাম। মণিকা নিরাপদ দূরত্বে থেকে চোখ রাঙিয়েছিল। কিন্তু এই ছোট্ট বাসায় সে পালাবে কোথায়?

যাহোক, শব্দ আসছে কীভাবে? বাসায় তো আমি একা। বেশ কৌতূহল হলো। করিডোর ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। জানি আপনারা ভাবছেন – এমনভাবে বলছে যেন না জানি কোন্‌ অভিযানে বের হলো! যাই ভাবুন, ব্যাপারটা হলো গিয়ে – করিডোর বড়োজোর পাঁচ মিটার হবে। দুই মিনিট লাগার কথা পৌঁছে গিয়ে কৌতূহল নিবারণ করতে। কিন্তু কী এক আশ্চর্য অব্যাখ্যেয় কারণে সম্ভবত আধাঘন্টা হয়ে গেল আমি হাঁটছি তো হাঁটছিই।

প্রথমে ভাবলাম ঘুমের ঘোরে এরকম হচ্ছে। এতক্ষণ তো লাগার কথা না! ট্রেডমিলে চড়লে যেমন কেউ কোথাও যায় না, আমিও কি অমন হাঁটছি নাকি? বিভ্রম হতে লাগল। কাঁচা রাতে সুরা পান করেছি কি করি নাই, মনে বিষম সন্দেহের উদ্রেক হলো।

ওদিকে লিভিংরুমের শব্দটা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকল। প্রথমে চাপা গুঞ্জন শুনেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ফিসফিস করে কেউ কিছু বলছে। কী বলছে বুঝতে পারছি না।

মনে মনে একটা গুণন করার চেষ্টা করলাম। ১২৩ গুণন ৩৫। কত হয়? জলদি বের করো, জায়ান চোধুরি। সাঁয়ত্রিশে নিশ্চয়ই বুড়িয়ে যাওনি! ১২৩ গুণন ৫ – ৬১৫। আর ১২৩ গুণন ৩ – ৩৬৯। তাহলে কত হলো? উত্তরটা জানি। ঠিকই বের করলাম। মাথা কাজ করছে। তাহলে মাতাল নই। কিন্তু করিডোরটা শেষ হয় না কেন?

মনে হচ্ছে একঘন্টা ধরে হাঁটছি। কোন্‌ জানি একটা সিনেমায় দেখেছিলাম একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে চূড়ান্ত অবিশ্যম্ভাবী না ঘটা পর্যন্ত। সেরকম কিছু কি? আমার মতো ছাপোষা নিতান্ত আমজনতার সাথে এ কীরকম বিচার! হঠাৎ খেয়াল করলাম, মণিকার শুচিবায়ুগ্রস্থতার বলী করিডোরের পরিষ্কার কার্পেটখানা কখন জানি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। পিচঢালা পথে হাঁটছি। অবিশ্বাস্য!

আশেপাশের সজ্জা কিছুই পরিবর্তন হয়নি। বড়ো বড়ো ঢাউস পটে কী কী জানি গাছ লাগিয়েছে, মণিকাই জানে। আমার এ ব্যাপারে জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। কিন্তু গাছগুলি দিব্যি আছে।

একটা বড়ো তেলচিত্রে আমার আর মণিকার ছবি। প্রথম দেখার দিনের ছবি। একটা মেলায় গিয়েছিলাম ঘুরতে। সেখানে তন্বী মণিকাকে দেখে সেই প্রথম হার্টবিট মিস করা যেন! খুব সুন্দরী নয়, কিন্তু ব্যক্তিত্বে, সারল্যে এবং সর্বোপরি অন্য এক ধরনের চাপা আকর্ষণে যা কেবল পুরুষেরাই বুঝতে সক্ষম – আমি খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার বিহ্বল উথলানো ভালোলাগা ধরে ফেলে ক্যানভাসে আমারই এক চিত্রকর বন্ধু না জানিয়ে। আমাদের বিয়ের দিনে উপহার হিসেবে পাই ছবিটা। সেই থেকে আমার কাছেই আছে। কিন্তু মণিকা কি দূরে সরে গিয়েছে?

অনুমান করছি দেড়ঘন্টা হলো। পিচঢালা পথ শেষে এবড়োখেবড়ো একটা পথে লাল ইটের গুঁড়ি ভাঙছি। আমার পা খালি। পায়ের তালুতে বেশ ব্যথা লাগছে। ব্যথা যখন লাগছে তখন এটা কি বিভ্রম হতে পারে? একটু থামলাম। ভাবলাম উলটো দিকে হেঁটে দেখি কী হয়। উদ্দেশ্য সফল হলো না! বুঝতেই পারছেন। এক ধরনের অজানা ভয়ে শিউরে উঠলাম। করিডোরটার বুঝি কোনো ইচ্ছে আছে। বুঝতে পারছি না কীভাবে মুক্তি পাব?

অনেক হেঁটে হেঁটে আমি এখন ক্লান্ত। লিভিং রুমের শব্দটা এখন বেশ জোরালো হয়েছে। কেমন জানি শব্দটা। অনেকটা আনন্দধ্বনির মতো। একটা স্বর কি পরিচিত?

সময়ের হিসাব থেকে অনেক আগেই বিচ্যুত হয়েছি। ঠিক জানি না কীভাবে চলছি, কখন এর শেষ হবে? শুধু এটুকু জানি লিভিংরুমে যেতে হবে। অনেকবার এই অন্তহীন চলা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছি কিন্তু সম্ভব হয়নি! হাল ছেড়ে দেবার মতো হয়ে গেল। ক্লান্ত শরীর ঘঁষটে ঘঁষটে টেনে নিয়ে চলেছি।

আরেকটা গুণনের চেষ্টা করলাম। ছোট্ট দুই অংকের। পারলাম না। মানসিক শ্রান্তিতে কাহিল প্রায়।

অবশেষে হঠাৎ করে পথটা যেন আবার কার্পেটমোড়া হয়ে গেল। কিন্তু এ আমাদের যত্নচর্চিত কার্পেট নয়। বেশ ময়লা। দাঁড়িয়ে আছি লিভিংরুমের দরজায়।

টোকা দেবো কিনা ভাবলাম। খুব কষ্টে মনে করতে পারলাম বাসায় কেউ নেই কিন্তু স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছি। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে হাতল ঘুরিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।

বিশাল টিভিতে কীজানি একটা মুভিতে চলছে। কিন্তু সেদিকে সোফায় জড়াজড়ি করে থাকা একজোড়া নরনারীর ভ্রুক্ষেপ নেই! টিভির দপদপানি আলোতেও নিজের স্ত্রীকে অন্য কারও বাহুলগ্না হিসেবে দেখতে ভুল করলাম না। আমার মণিকা, আমার সুহাসিনী প্রিয়তমা … ওর বস আজমল ভোঁদরটার সাথে … বেশ কবার দেখেছি মণিকার বসকে। মধ্যবয়সী ঘোড়েল কাক। প্রচুর পারফিউম ব্যবহার করেন। সেই পারফিউমের গন্ধটা নাকে এসে গোঁত্তা খেলো। আনমিস্টেকেবল! আমি আর ভাবতে পারলাম না। প্রচণ্ড আঘাতে জ্ঞান হারালাম।

ঘুম ভাঙল অনেক বেলায়। চোখ মেলে দেখি মণি আমার শিয়রে বসা। মণিকা ট্যুর সেরে এইমাত্র ফিরেছে। মিষ্টি হেসে বলল, এত বেলা করে ঘুমাচ্ছ কেন? কী হয়েছে?

প্রথমে বুঝতেই পারলাম না কোথায় আছি? তারপর সব পরিষ্কার মনে পড়ে গেল। কিন্তু দিনের আলোতে গত রাত্রিরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা এত অবাস্তব মনে হলো যে হাসি পেয়ে গেল।

হাসতে হাসতে বললাম, দুঃস্বপ্ন দেখেছি। কখন এলে?

মণিকা ঝুঁকে আমার বাসি ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে দিলো। আমিও সাড়া দিলাম জোরোশোরে। তখনই খুব হালকা আজমল সাহেবের সুগন্ধীর গন্ধটা পেলাম। বুকটা ধড়াস করে উঠল।

চকিতে চুম্বন ভেঙে সোজা হয়ে বসলাম। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, পায়ে একগাদা ধুলোকাদা লেগে আছে।

মণিকার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম। অতঃপর শান্ত বারুদের স্বরে জিজ্ঞেস করলাম – কাল রাতে কোথায় ছিলে?

ফ্লার্টিং ২

– এই যে শুনছেন, মাস গেল, নামটা না বলছেন!

কে কখন চেয়েছে, আমার বয়েই গেছে বলতে।

– আহা, শুধু দেখাই সার হচ্ছে, শিকে না ছিঁড়ছে।

তবে এবার থামুন, চোখ ফিরিয়ে রাস্তা মাপুন!

– কী করে মাপি, দুজনেই যে একই দিকে থাকি।

কী করিৎকর্মা সেন, তাও বুঝি বানিয়ে নিয়েছেন!

– মজিলে সখী দেহমন, কে কবে রোধে পথের মিলন?

এ তো নাছোড়বান্দা, অপমানেও নড়ে না ধান্দা।

– থামুক লড়াই, পথের ধারে ঐ ক্যাফেতে একটু জিরাই?

কী বলিহারি চাওয়া, যেন চাইতেই মিলবে মেওয়া!

– সবুর করেছি ম্যালা, সয় না আর এই অবহেলা।

বলছেন কীসব উল্টাপাল্টা? আয়নায় দেখেন পোড়ামুখটা?

– আয়না আর দেখি না, তোমায় দেখেছি, আর লাগে না।

সবই দেখি ঠোঁটের ডগায়, প্রেমিক পুরুষ কিছুই না ডরায়

– এবার তবে বলো নামটা, আর মেরো না মুখ ঝামটা।

নাম আমার প্রেয়সী, এবার ছাড়ুন এখন তবে আসি।

– আহা কী মধুর! কানে যেন প্রেমের সান্তুর!

এখন পিছা ছাড়ুন, যেদিকে যাবেন যান, ভাগুন।

– আমার নামটা যে বললাম না, জানতে কি চাও না?

কে জানতে চায়, হ্যাঁ বুঝি এত সহজে বলা হয়ে যায়?

– মেয়েদের বুঝা ভার, তবুও আমি মানছি না হার

সে আশাতেই থাকুন, কেটে পড়ি হিহি আঙুল চুষুন।

প্রহেলিকা

আমাদের কিছু নেই আবার সব আছে।

আছে আপাত শক্ত মাটি, আছে দৃঢ় ছাদ।

যুথবদ্ধ নিগূঢ় ভ্রম আছে

আছে সমাজের লুব্ধক নাগপাশ।

পরিবার আছে, বন্ধন আছে

বাঁধা পড়ার সূক্ষ্ম জাল আছে।

পাখিসম মন আছে, থরথর ডানা আছে

তবুও কখন যে কবে ভুলে গেছি

নি: সীমে ওড়বার আজন্ম লালিত সাধ!

আমাদের সব আছে আবার কিছুই নেই!

সংসক্তির সবই আছে তবুও ঠোঁটকাটা গভীরে

পোক্ত আঠার শক্ত ভিত্তি কোথা পাই?

আমাদের কিছু নেই, আসলেই কিছু নেই।

অথচ কী পরিহাস!

মায়াজালের এই প্রহেলিকা ছাড়া

দাবী করার মতো

নান্দনিক আর কিছুই নেই!

জল ফেলো না, প্রিয়!

জল ফেলো না, প্রিয়
আমায় উতলা করো না।
জগতের শুদ্ধতম সত্যের দিব্যি –
তোমাতে বাঁচি, তোমাতেই মরি।
কোনো কোনো পথ হয়তো
পাবে না ঠিকানা।
তবুও বুকভাঙা পথে
যুগলের স্বপ্নরা লুটোবে না!
 
জল ফেলো না, রানি
দুর্বহ ব্যর্থতার দায়ে
পৌনঃপুনিক বিদ্ধ করো না!
বরং চলো, মুছে ফেলি
এই অতলান্ত হাহাকার।
গহন মনের নিরুদ্ধ ব্যাকুল সন্তাপ।
এসো বাঁচি একটু হলেও
আশার মধুর বিভ্রমে।
আমার যে একটাই তুমি,
তোমারই রবো যে আমি!
 
জল ফেলো না, প্রিয়
এই নাও ব্যথাভরা সহস্র চুম্বন।
জগতের শুদ্ধতম দুখের দিব্যি –
তোমাতেই যে আমার আমরণ দহন
তোমাতেই মরে বাঁচি নিত্যি!