নীরব অভিমান

চোখ ভরে আসে তপ্ত জলে,

কার উপর কীসের অভিমানে

বুকের জমিনে আহত শ্রাবণ নামে?

কী দিই জবাব যদি কেউ শুধায়?

জানা নেই, কিছু যে জানা নেই

কেন কাঁদে এই মন ব্যাকুল নিরুপায়।

দৃষ্টি যে তার শূন্য মলিন উদাসে

বুক ভাঙে পাঁজরের সস্তা দামে!

কে রোধে কণ্ঠ সারাবেলা

এই বিষন্ন আকুলি হুতাশে?

চোখ ভিজে যায় নোনা সন্তাপে

অমোঘের মেঘে জ্বলে

না পারার নি:স্ব প্রখর দহন।

কে হাসে যা কিছু ঘটেছে ভালো

তার সবটুকু আমূল খুইয়ে,

সর্বহারার উথল অভিমানে?

তাই নীরবতা, তোমায় চেয়েছি কাছে।

তুমি যে আজ আমার

বড়োই একান্ত আপন!

শূন্যতা

সকালটা এলো মনমরা হয়ে
যেন কোথাও কেউ নেই!
শুনছি একটা নাম না-জানা পাখির ডাক
অথচ বৃক্ষহীন এই চেনা পথে
নেই কোনো পাখির সুখ-নীড়!
অজানা ব্যথায় ভারী হয়ে যাই
কী যেন নেই, আহা কী যেন নেই!
সবারই তাড়া আছে
শুধু আমারই যেন আজ কোথাও যাবার নেই,
কিচ্ছু করার নেই!



অভিনয়

সময়ের অনঙ্গ দহন
চেপে রেখে বলি, ভালো আছি! 
সুখের মস্ত অসুখে
নির্বাণ ফস্কে বলি, এই বেশ আছি।
আমি ভালো আছি, আহা বেশ আছি। 
তোমাদের নিটোল ধারাপাতে
এখনও অপাংক্তেয়ই আছি!

চেয়ে চেয়ে দেখি,
মাইলফলকে লিখছে সুখিজন
সুখের যত কাহন
সব পরিপাটি, বিন্যস্ত চুলচেরা
যেন রাজসিক সদন। 
ভালো আছে, সব ভালো আছে
শুধু আমারই বড্ড ছন্দপতন!
ভীষণ অভিমানে রোদি,
সত্তার গহীনে
অনস্তিত্বের পদরেখা আঁকি।
যদি ভুলে যাওয়া যায়, ভুলে যাওয়া যায়
এই মেকি যাপিত জীবন। 

সময়ের অনঙ্গ দহন
মুখোশের নিত্য পুনর্জন্মে ঢেকে রাখি।
আকর্ণ হেসে বলি,
বেশ আছি, এই তো ভালো আছি। 
নিষ্পেষণের ঝড় আমূল ছাপিয়ে বলি, 
বেদনা বলতে আদৌ কিছু আছে কি!

একটা রিমোট গাড়ির বেদনা

মনে পড়ে বহুদিন আগে
একটা রিমোট কন্ট্রোলড্‌ গাড়ির জন্য
কত কান্নাটাই না কেঁদেছি।
মনে পড়ে মিলিদের দোতলায়,
মিলনের উদ্ধত মুখ।
ধরে রেখেছে একটা লাল গাড়ি –
কালো ডোরায় পাশ কাটা।
আর আত্মরম্ভিতায় স্ফীত বুক!
মনে পড়ে, সব মনে পড়ে
একটা ঝা চকচকে চার চাকার লোভ…
পাঠিয়েছে তার কাকা
সুদূর আমেরিকায় যার নিত্য থাকা।
মনে পড়ে ছোট্ট বুকে অপ্রাপ্তির দাবানল ক্ষোভ,
মিলিদের করুণা মিশ্রিত হাসি –
যেন ধন্য করেছে চাখতে দিয়ে
আরাধ্যের সুখ – রাশি রাশি!

মনে পড়ে মাকে কত জ্বালিয়েছি।
শপথ করেছি সুবোধের অলীক অসম্ভব মন্ত্রে!
ভালো হয়ে যাবো মা, একটুও দুষ্টুমি করবো না।
কিনে দেবে একখানা রিমোট গাড়ি?

আজ মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে…
হঠাতই যেন বুঝে যাই কতকাল আগের
মায়ের অসহায় মুখ, তাতে বেদনার আঁকিবুকি!
অবুঝ শিশুর কাতর চাহনি…
বুঝবে সে কীসে? নিত্য টানাপোড়ার
অকথ্য দর কষাকষি!

মনে পড়ে কতকাল আগে
একটা অধরার জন্য কত কেঁদেছি।
আজও তাই আনমনে হেঁটে যাই খেলনার ভূবনে।
রিমোট গাড়ির পাশে এখনো চাই জুলজুলে চোখে।
দাঁড়িয়ে থাকে সময় অবধূত ঔদাসীন্যে,
আর আমার আহত শৈশব।
এখনো সুযোগ পেলেই সেটি
হ্যাংলার মত বিমুগ্ধ হারাতে চায়…

একটা রিমোট গাড়ির বেদনা
এ জীবনে যে ভুলবার নয়!!