প্রার্থনা!

একটা ভাল কিছু দাও, প্রভু
একটা অদ্ভুত কিছু দাও।
নিয়েছ সব কেড়ে – কিছুই বলি নি।
দিয়েছ দুখের উষর ভূমি – রা কাড়ি নি।
আর কত ভোগালে একটু তাকাবে?
নিন্দা করবে যে মন্দেরাও…
অন্তত একটা মন্দের ভাল দাও!
 
থেকেই যদি থাক তুমি, মৌনতা ঝেড়ে ফেল।
একটা অভূতপূর্ব কিছু বল।
মুক্তি দাও প্রভু, আমায় মুক্তি দাও।
একটা স্বস্তি মেশান হাসি দাও।
নিয়ে নাও এই জটিল জীবন, কুটিল মারপ্যাঁচ
এই বিদগ্ধ জ্ঞানের অকেজো মুখোশ –
নৈরাশ্যের ক্লেশকর দিন-মাস!
একটা নিছক সাদাসিধে জীবন দাও –
প্রত্যাশা বিহীন…
আমায় একটা ভাবনাহীন প্রহর দাও
যার কবোষ্ণ আলোয় দেখব গহীনের আমিকে।
যতই থাকুক অপূর্ণতা কিংবা পতনের হাহাকার,
ভালবাসব তাকে। যত দীন হোক না সে
তুলে নেব এই দু’হাতের অতল-ছোঁয়া স্পর্শে!
একটা নির্বোধের জীবনই দাও তবে!
ডুবে থাকি দিন-আনি-দিন-খাই সুখের
কন্টকহীন প্রস্রবণে!
 

একটা ভাল কিছু দাও প্রভু,
একটু দয়া দেখাও।
কারুকাজের জটিলতা আর চাই না – ফিরিয়ে নাও।
আমায় আনমনে একটা সহজিয়া সুর ভাজতে দাও!

 

প্রচ্ছন্ন রূঢ়তা

কোনো কোনো কথা জন্মান্তরের দাগের মত লেগে যায়
কোনো কোনো গরল অমৃতের মুখোশে হত্যার সনদ পায়!
জানা কথা – যাবতীয় তির বোঝেই না লক্ষ্যের চাপা ক্ষত
কী আসে যায় যদিবা অপ্রস্তুতে হয় আহত কিংবা নিহত!

কেউ কেউ অহেতুক রূঢ়তায় খুঁজে আত্মপ্রসাদ
আঘাতে আঘাতে ব্যথিত বুক – নিষণ্ণ নাভিশ্বাস।
কারো কারো দেখার চোখ থেকেও নেই –
শুধুই ব্যবচ্ছিন্ন আঁধার – অসংবেদি রাশি রাশি।

কারো ক্রুর হাসি সাদা চোখে তাচ্ছিল্যেরও কিছু বেশি
কারো বুকে স্রেফ বিঁধে যায় অফেরতা কথামালা
বোঝে না হায়, কারো স্বভিমান পায় নির্দয় ফাঁসি!

কোনো কোনো কথার ছাপ নির্মোচ্য পদচিহ্ণ রেখে যায়।
থেকে থেকে জাগে ক্ষরণকাল – আঘাতে দুর্মর!
কোনো কোনো বিষাদ নিশাতি উল্লাসে
ফিরে ফিরেই ভাঙ্গে বুকের পাঁজর।

—————————————
শব্দার্থঃ
নিষণ্ণঃ অবস্থিত
ব্যবচ্ছিন্নঃ কাটা-ছেঁড়া করা হয়েছে এমন।
অসংবেদিঃ সংবেদনশীল নয় এমন।
নির্মোচ্যঃ মোছার অযোগ্য।
দুর্মরঃ কিছুতেই মত বদলায় না এমন।
নিশাতঃ ধারালো, তীক্ষ্ণ অর্থে।

একটা রিমোট গাড়ির বেদনা

মনে পড়ে বহুদিন আগে
একটা রিমোট কন্ট্রোলড্‌ গাড়ির জন্য
কত কান্নাটাই না কেঁদেছি।
মনে পড়ে মিলিদের দোতলায়,
মিলনের উদ্ধত মুখ।
ধরে রেখেছে একটা লাল গাড়ি –
কালো ডোরায় পাশ কাটা।
আর আত্মরম্ভিতায় স্ফীত বুক!
মনে পড়ে, সব মনে পড়ে
একটা ঝা চকচকে চার চাকার লোভ…
পাঠিয়েছে তার কাকা
সুদূর আমেরিকায় যার নিত্য থাকা।
মনে পড়ে ছোট্ট বুকে অপ্রাপ্তির দাবানল ক্ষোভ,
মিলিদের করুণা মিশ্রিত হাসি –
যেন ধন্য করেছে চাখতে দিয়ে
আরাধ্যের সুখ – রাশি রাশি!

মনে পড়ে মাকে কত জ্বালিয়েছি।
শপথ করেছি সুবোধের অলীক অসম্ভব মন্ত্রে!
ভালো হয়ে যাবো মা, একটুও দুষ্টুমি করবো না।
কিনে দেবে একখানা রিমোট গাড়ি?

আজ মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে…
হঠাতই যেন বুঝে যাই কতকাল আগের
মায়ের অসহায় মুখ, তাতে বেদনার আঁকিবুকি!
অবুঝ শিশুর কাতর চাহনি…
বুঝবে সে কীসে? নিত্য টানাপোড়ার
অকথ্য দর কষাকষি!

মনে পড়ে কতকাল আগে
একটা অধরার জন্য কত কেঁদেছি।
আজও তাই আনমনে হেঁটে যাই খেলনার ভূবনে।
রিমোট গাড়ির পাশে এখনো চাই জুলজুলে চোখে।
দাঁড়িয়ে থাকে সময় অবধূত ঔদাসীন্যে,
আর আমার আহত শৈশব।
এখনো সুযোগ পেলেই সেটি
হ্যাংলার মত বিমুগ্ধ হারাতে চায়…

একটা রিমোট গাড়ির বেদনা
এ জীবনে যে ভুলবার নয়!!

অনিকেত

আমি তোমাদেরই একজন। মিশে থাকি তোমাদের
হাসি-কান্না, দুঃখ-অভিমানে, এবং শোরগোলে।
কিংবা হয়তো আমি তোমাদের কেউ নই; ছিলামই না কখনো!
থাকিনি কখনো তোমাদের আটপৌরে জীবনে – স্বাভাবিক ডামাডোলে।
আমি অদৃশ্য, অস্পৃশ্য – ধরাছোঁয়ার বাইরে। কখনো আসিনি
তোমাদের অমলিন স্পন্দিত লাইম-লাইটে! কী আর হবে এসে?
কিংবা হয়তো মিশে গেছি তোমাদের আত্মায়, বোধের নিগূঢ় মূলে
তোমাদের অজানিতে, বন্ধুতার নিরুচ্চার আপন পাকচক্রে।
আমি আসলেই জানি না আমি কে? কে আমি? অথবা, কে তোমরা?
কুহক এ জীবন, বন্ধনের লুব্ধক স্বপ্নে আমূল বিভোর
অথচ জানে না কোথায় পথের শুরু –
কোথায় জমেছিলো অযাচ্য পথশ্রমের নিদারুণ হঠকারি ধুলো!
আমি তোমাদের হয়েও কেউ নই – নেই আমার কোনো ঠিকানা!
যাপিত জীবন চলছে এক মিছে সংসক্তির ছন্দে – হয়তো এটাই দস্তুর।
আমি উদাসীন, আমার নেই কোনো বাঁধনের জানা সীমানা।
আমি বেভুল পথিক। জানি না তবু কেন পথের জনারণ্যে
সুচিসম ভালোবাসাগুলো নেই কুড়িয়ে – আপ্লুত আবেগে!
আমি দ্বিধান্বিত ব্যাকুল, তোমাদের ভালোবাসায় কেন
বারে বারে, কারণে অকারণে ভাসে বুকের দীর্ঘশ্বাসি দু’কুল?
আমি উদাসীন, আমি তো কারুর নই, এ ভালোবাসা নিতান্ত অনভিপ্রেত!
জেনেও কেন ভুলে যাইঃ আমি উদাসীন – যাবজ্জীবনের অনিকেত!

তুমি আসবে বলে..

তুমি আসবে বলে
ভালোবাসাহীনতায় অনাথ পাখিরা
আবার বুঝি মেলেছে ডানা
বঞ্চনার পিঙ্গল আকাশে।
তুমি আসবে বলে
সুর-বিস্মৃত পাথর এ হৃদয়ে
আবার জমেছে গুঞ্জন;
অজানিতে বুঝি গুনগুনায়
ছন্দ-হীনতায় মগ্ন ব্যাকুল এ মন।
আমার এ জগদ্দল মৌনতা
তুমি ভাংবে বলে অনুভবি,
ভাবনার অতলে ঠিকানা হারালো
উদাসীনতার ক্লেশকর প্রত্যয়!
তুমি আবার ফিরবে বলে
নিদাঘের রং বুঝি বদলে যায়!
বুকের তপ্ত হাহাকারে মেশে
ছায়া সুশীতল, বারিময় অর্চনা।
তুমি আবার আসবে বলে
প্রতীক্ষায় ক্লিষ্ট আমার এই আমি
হৃদয়ের শব্দহীন ক্রুর জোছনায়
প্রেমময় মেঘের আড়াল খুঁজে যায়।

আক্ষেপ – এক রূপোপজীবিনীর জন্য!

সুন্দরীতমা, তোমায় দেখলে আমার বড়ো আক্ষেপ হয়।
অস্ফুটে বলিঃ সুন্দরের কী নিদারুণ অপচয়!
তোমার নিঁখুত কাটা চিবুকের খাঁজে যখন খেলে যায়
জমকালো বাণিজ্যের বেলাজ দ্যুতি,
কাতর হৃদয়ে ভাবিঃ স্বর্গীয় চারুকলার কী ভয়ানক বিচ্যুতি!
তোমার হাসিতে মুক্তা ঝরে,
সূচ্যগ্র নাকের চূড়ায় নিত্য খেলে স্রষ্টার অহমিকা!
অথচ তুমি জানোই না,
ভোমরার লাম্পট্যে সদা নিবেদিতা…
আকর্ষণেই মত্ত স্থূল দেহ-পঞ্জিকা!

সুন্দরীতমা, তোমায় তবু নিষিদ্ধ আবেগে ছুঁয়ে ফেলি।
পঙ্কিল জেনেও চরণ ডুবাই।
পাপ-পূন্যের একাকারি জলে বেভুল আমি খেই হারাই!
তোমার ক্রীড়নক চোখে হারাতে হারাতে ভাবিঃ
কী সহজে অলির মৃত্যু লিখো অনর্গল…
যদি সত্যিকারের মরণ দিতে পারতে?
পারতে যদি হৃদয় খুড়তে…
ধরতে যদি অধরে উষ্ণতম অকপট আকুলি
বুঝতে যদি প্রেমের সরলতম মিঠে বুলি!

তোমায় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নিজের কাছেই নিত্য ভাংচুর হই।
অক্ষম রাগে ভেসে যাই –
আহা, সুন্দরের কী নিদারুণ অপমান!

পারতাম যদি ছুঁতে অতলান্তের পরম নিষ্পাপ মনটিকে,
যেটি কোনো কোনো ব্যাকুল সাঁঝে কি
একটিবারও কেঁদে ওঠে না!
নারীত্বের প্রবল অপমান কি কাঁপিয়ে দেয় না
বিকিকিনির লাল-নীল আদিম সামিয়ানা?

সুন্দরীতমা, তোমায় যখনি দেখি অভিশাপ দেই নিজেকে,
অভিশাপ দেই স্বীয়-ভীরুতায়, যুগান্তরের নির্জলা কাপুরুষত্বে।
জানি, কখনই বলা হবে না, বাড়িয়ে দেবো না হাত।
বলব নাঃ রূপোপজীবিনী, এসো তোমায় আলো দেখাই!
জগতের অন্যতম নিকৃষ্ট পাপে বড়ো আক্ষেপে বলিঃ
মনুষ্যত্বের কী নিদারুণ অপচয়!!

ইশ্বর, আমার কিছু কথা শুনবে কি?

ইশ্বর, আমার যত শূন্যতা গলিয়ে
একটা চাঁদ গড়ে দেবে?
যে চাঁদের অগোছালো জোছনায়
মিশে থাকবে আমার হাহাকার!

ইশ্বর, আমার যত ভালোমানুষিতার বিনিময়ে
এটুকু কি করবে?
ঝুলিয়ে দেবে সে চাঁদ
বৃষ্টি ধোয়া ব্যথা-গন্ধী রাতে
তার আয়ত আঁখির মাপে?
হয়তো সে তাকিয়েই স্তব্ধ হয়ে যাবে..
হাজার রাত্রির দীর্ঘশ্বাস ঘন হয়ে বসবে তার বুকে।

ইশ্বর, এতটুকু কি পারবে না?
বিরহ জ্বালা মিশিয়ে দেবে সে চাঁদনীর মায়ায়।
আর আমার বিক্ষত হৃদয় বসিয়ে দেবে চাঁদের মুখে!
হয়তো সে আঁখি মেলেই অশ্রুসজল হবে।
আমার জন্য কোন্‌ অজানা কোণে অনাবিষ্কৃত
ভালোবাসাটুকু উড়িয়ে দেবে বিষন্ন বাতাসে।

ইশ্বর, পারো কি এতটুকু সহৃদয় হতে
আমার বুভুক্ষু হৃদয়ের প্রতীক্ষিত চুম্বন
অনবধানে এঁকে দাও ওর ওষ্ঠের আঙ্গিনায়।

ইশ্বর, আমার যত অপ্রাপ্তি জমিয়ে
একটা চাঁদ গড়ে দাও না?
যে চাঁদ অনাদিকাল ওকে কাঁদিয়ে যাবে
নিভৃতে, আমার কথা ভেবে ভেবে।

ফিরে যাই ছোট ছোট উপেক্ষাগুলোর মাঝে…

জানো কি? বহুদিন হলো
আমি অনেক কিছুই দেখি নি!
কী এক ভীষণ ব্যস্ততায় ছোটখাট
জানাগুলিকে আদৌ চিনি নি!
প্রতিদিন হেঁটে যাই যে পথে,
সেই পথের শেষেই যে একটা
লাল ডাকবাক্স আছে, মাথায় তার কালো টুপি।
জানো, খেয়ালই করি নি!
আরো ধর, বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে
একাকী ধূসর একটা টেলিফোন বুথ,
লাল তার ছাউনি…
জানো, আমার কভু সেখানে যাওয়াই হয় নি!
কিংবা পাশেই ঘুরে গেছে যে গলি,
কখনো ভাবি নি একটু পা বাড়িয়ে দেখি…
কিংবা মোড়ের মাথায় ফ্রাইড চিকেনের
সেই মেয়েটি
বড় বড় চোখ, নত মুখের ঈষৎ প্রশ্রয়ি হাসি…
এমন কিছু হয়তো নয়…
তবুও তাকে অজানা বিদ্বেষে বরাবর
এড়িয়েই চলেছি।

জানো, আমি অনেক কিছুই দেখেও দেখি নি।
ফাঁকা চোখে নিরন্তর পাশ কেটে গিয়েছি।
কী ভীষণ স্বার্থপরের মত আমি কেবল
কেবল বড় কিছুর পিছে পিছেই ছুটেছি!
কখনো নেই নি টেনে ক্ষুদ্রত্বের অদ্ভুত ঐশ্বর্য!
অথচ কে না জানে, এইসব আপাত
অবহেলার বস্তুই গড়ে সত্তার প্রকৃত স্বত্ব…
জগতে অভিজ্ঞতাই যে অস্তিত্ব!

তাই আজ বহুদিন পর হেঁটে গেলাম ঘুরপথে
অলি-গলি তস্য গলি আজ দেখেছে
বেভুল আমাকে।
গম্ভীর ডাকবাক্সের সামনে গিয়ে মাথা নেড়েছি।
বলেছি – ভালো আছো বন্ধু?
লাল বুথে সেঁধিয়ে গিয়ে নির্বিবাদে
কয়েন ফেলে অচেনায় ডায়াল করেছি।
আর আনোভার সামনে গিয়ে বহুদিন বাদে
চোখ ফিরিয়ে নেই নি!
হাসিমুখে বলেছি – কেমন আছো? ক’টা উইংস দেবে?

জানো, আজ বহুদিন পর যত ক্ষুদ্র উপেক্ষাগুলিকে
হেঁটে হেঁটে উদাসীন,
জানতে চেয়েছি।
কেউ জানে না, শুধু তৃপ্ত এ মন জানে
কী অদ্ভুত অপার আনন্দে আমি ভেসেছি!
উপেক্ষার ব্রাত্যজনকে বুকে তুলে
আমি ক’ফোটা মহার্ঘ্যের
অনুপম জল ফেলেছি!

♥চুপি চুপি♥

দাঁড়ান বলছি। এত তাড়া দিলে কি চলে? ঘটনাগুলি ঝটপট ঘটে গেলো।

চশমা কিনতে যাবে-এ উপলক্ষ্যে যে আমার ডাক পড়বে…কোনোদিনই ভাবি নাই! জীবনে বোধহয় এই প্রথম নাকের কাঁধে পাকাপাকি চেপে বসা দৈত্যটিকে বেশ ভালো লাগতে থাকল। সম্মতি জানাতে গিয়ে প্রায় তোতলা হয়ে গেলাম। হা ঈশ্বর, এসব কী হচ্ছে? মেয়েটি যদি বুঝে যায়? কোনোমতে বললাম: ‘ফ্রাইডে আফটারনুন –এ যাওয়া যেতে পারে’। হ্যাঁ সূচক একটা মাথা নাড়িয়ে মেইজিন চলে গেলো। আমার ভুলও হতে পারে…একটা অস্পষ্ট হাসির রেখা কি ছিল না ওর ঠোঁটে? বুকের কোথায় যেন কিছু একটা ভাংচুর আবার শুরু হল?

এরকমই হয়ে আসছে বেশ ক’টি বছর। হ্যাঁ, আপনারা যা অনুমান করেছেন তাই হয়তো ঠিক। আমি এই মেয়েটিকে একান্ত চাই…অবশ্যি একতরফা…এটাও নিশ্চয় বলে দিতে হবে না! নাকি অন্য কিছু একটা আছে, প্রচন্ড চাপা স্বভাবের মেয়েটিকে বোঝাই দায়…সত্য বলতে গেলে কথাটা আমার জন্যও খাটে বৈকি!

মেইজিন কে প্রথম দেখাতেই ভাললেগে গিয়েছিলো। আমার সহকর্মী ছিল। কিন্তু অনেকদিন পাশাপাশি কাজ করেও ঐ যে আপনারা যেটা ভালো জানেন, সেটা আর বলা হয়ে ওঠে নি। ইনফ্যাক্ট, কেউই বলতে পারে নি। সহজ ব্যবহারের মোড়কে একধরণের দুর্ভেদ্য দেয়াল ছিলো যেটার ভাঙ্গাটা অসম্ভবের নামান্তর ছিল। আপনারা হয়তো বলবেনঃ ‘এ আর এমন কী? ওরকম হয়েই থাকে। তোমার সাহসে কুলোয় নি!’ হবে হয়তো…কিন্তু বুঝতে বুঝতে বিচ্ছেদটা হয়েই গেলো।  মনে থেকে গেলেও ব্যস্ততার কারণে আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। সেদিন হঠাত করেই স্টেশানে দেখা হয়ে গেলো। কথায় কথায় জানলাম চোখে ভালো দেখছে না; আমি যদি সময় করে ওকে নিয়ে যাই? আপনারাই বলেন, আমি ওর জন্য সময় বের করতে পারবো না? এও কি হয়? টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়া কী যেন একটা খুঁজছিলাম, নিজেও ভালো জানি না।

তারপর মাঝের দিনগুলি কীভাবে যে কেটে গেলো…ভয়ানক অস্থিরতা…কী পরবো, কী বলব…এইসব হাবিজাবি। একটু হাসিও পেলো। নিজেকে বললামঃ ওহে প্রেমের মরা, শপিং –এ সাহায্য করতে তোমায় ডেকেছে। আর তুমি কিনা…ছিঃ ছিঃ! সে যাই হোক, শুক্রবারের সকাল-দুপুরটা অফিসে যেন কাটতেই চাইছিল না। তার উপর সহকর্মী মহিলা জেমস বন্ড মেয়েটির অনুসন্ধিতসু চোখ নাচানিঃ ‘কি হে! আজকাল দেখতেই পাচ্ছো না বুঝি? তা, মেয়েটি কে শুনি, ওই যে আজ বিকেলে যাওয়ার জন্য হেঁদিয়ে মরছ?’

নিঁখুত অভিনয়ে আকাশ থেকে পড়ে বললাম, ‘ কি যা তা বলছ কারমেন, কোথায় আবার যাব?’
থাক, আর জঘণ্যতম অভিনয় করতে হবে না। ইয়েলো স্টিকি নোট এ নাম আর সময় লিখে মনিটরে সাঁটিয়ে পূজো করছো আর বলছো কিনা কী যা-তা বলছি হা হা হা। সত্যিই তাই তো! ভুলোমনের মাশুল আর কী! জিভ কেটে ২০ মিনিট হাওয়া হয়ে যেতে হলো। নইলে কারমেন কী জিনিস যে বুঝবে সে আজীবন মনে রাখবে।

মোবাইলে নক নক শুনে তাকিয়ে দেখি একটা মেসেজ এসেছে। মেইজিন। সে নাকি আমার জন্য স্টেশানে অপেক্ষায় আছে। হাউ সুইট! তড়িঘড়ি করতে গিয়ে টেবলে হোঁচট খেয়ে গেলাম। অট্টহাসি শুনে কারমেন কে জায়গামত একটা রাম-চিমটির অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

বিশাল স্টেশানে ঘরফেরতা গিজগিজে মানুষের ভীড়ে কাউকে খুঁজে বের করাটা বিরাট ঝামেলার। মোবাইল করা যেতে পারে, কিন্তু করতে ইচ্ছে হলো না। অনুমানের উপর ভিত্তি করে গেইটের বাইরে কস্টা কফি’র আশেপাশে চোখ বুলালাম। আর তাতেই সুন্দরী চোখের ফ্রেমে বন্দী হয়ে গেলো। একধরণের ছেলেমানুষি পেয়ে বসল; প্রতীক্ষায় ওকে কেমন দেখা যায় আর কী! আর সে দৃশ্য…একবার মোবাইল, একবার গেইটে। সুন্দর মুখখানায় বহু আকাঙ্খিত কাউকে স্পট করার শিশুসুলভ চাঞ্চল্য-বিরলই বটে! মনের ভেতর দুর্মুখ আমিটি বলে উঠলোঃ আবে গাধা, চশমা কেনা কীভাবে হবে এই চিন্তায় ব্যাকুল হয়েছে আর তুই কিনা ছিঃ ছিঃ! ‘ইয়্যু’ড নট বিলিইভ ইয়্যর আইজ, ইফ টেন মিলিয়ন ফায়ারফ্লাইস…’ মোবাইলের রিংটোনে সম্বিৎ ফিরে দেখি কল করেছে। আমাকে ওদিকটায় ডাকছে। আমার যা স্বভাব, ভাবনায় হারিয়ে গেলে তো খেয়াল থাকে না..দেখেই ফেললো নাকি?

তুমি বুঝি খুঁজছিলে আমাকে অনেকক্ষণ? আমি তো তোমাকে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।

নাহ, এই এই তো…এইমাত্র এলাম। দাঁড়িয়ে দেখছিলাম-এটা কীভাবে বলি আপনারাই বলুন। কিছু কিছু মিথ্যে সত্যের মত করে বলতে হয় নইলে উপায় নাই। টুকটাক কুশল বিনিময়ের ফাঁকে অপ্টিসিয়ানের কাছে যাচ্ছিলাম। বেশ বুঝতে পাচ্ছিলাম আগের মত স্বচ্ছন্দ আর নেই সে। কেমন আড়ষ্ট হাঁটছে। কিন্তু কেন? আমার উপস্থিতি…তবে কী?

তুমি আগের মতই আছো দেখছি! হুটহাট ভাবনায় ডুবে যাও; একটা এক্সিডেন্ট যে এতদিনে করে বস নি এটাই আশ্চর্য!

তা, এক্সিডেন্ট করলেই কী আর না করলেই কী? কেইবা ভাবছে বলো? এ দুনিয়াতে তো আমার বলার মত কেউ নেই!

সে কী! কেউ জুটেনি এতদিনে?

এখন তো মনে হচ্ছে এক্সিডেন্টে কাঁদবার জন্য হলেও একজন থাকলে মন্দ হতো না…হা হা হা।

মেয়েটিও হাসছে। এত সুন্দর লাজুক হাসি! হঠাৎ বড় শূন্য শূন্য লাগতে থাকলো। বুকের ভেতরে একটা চিনচিনে ব্যথা। সেটা এই হঠাৎ প্রাপ্তিতে নাকি বহুকালের অপ্রাপ্তিতে-ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। এখন আপনারাই বলেন ঐ যে আপনারা কী যেন একটা বলাবলি করছিলেন সেটাই আমাকে পেয়ে বসেছিল কিনা?

চেংড়া অপ্টিসিয়ানটি সময় নিয়ে (একটু বেশিই হবে, আপনারাই বলুন, সহ্য হয়?) ছোটখাট সার্কাস দেখিয়ে একটা প্রেসকৃপশান ধরিয়ে দিল। দেখলাম এমন কিছু নয়; সেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। এখন ফ্রেম দেখার পালা।

এত সুন্দর চোখ তোমার…সেগুলি কিনা এই হতচ্ছাড়াগুলি (চশমা) দু’হাত দিয়ে সারাক্ষণ আগলে রাখবে! উহ! ভাবতে পারছি না!

বুঝলেন আপনারা, জানি না কী ছিল এই কথায়…মেইজিন এতো মজা পেয়ে হাসতে থাকলো যে আশে পাশের কয়েকটা চ্যাংড়া ট্রেইনি এসে অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। কীভাবে তারা সাহায্য করে ওকে ধন্য করবে তাই বলে কান ঝালাপালা করে ফেললে। এমন কটমট করে চাইলাম যার মানে করলে দাঁড়ায়ঃ ‘ ভালো চাস তো কেটে পড় উজবুকের দল’। কীভাবে আমি এই কাজটি করতে পারলাম, সেটা আপনারাই বের করুন।

মেইজিন বলে – তোমার চোখও তো সুন্দর! তবে সেগুলি কেন লুকিয়ে রাখো? (মিটিমিটি হাসি)

আহেম, ইয়ে…সেটাও দেখতে পেয়েছো? আশ্চর্য! আনন্দদায়ক কিন্তু অপ্রস্তুত ভাবটা লুকোতে মেয়েদের একটা ফ্রেমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ফ্রেমটা পরিয়ে দিতে গিয়ে ওর পুরো মুখটা আমার দু’হাতের মধ্যে হঠাত বন্দী হয়ে জমে গেলো। একটা বারংবার না বলা অচেনা আলো গভীর কিছু উপলব্ধিকে সহসা আলোকিত করে দিয়ে বিস্ময়ে যেন থির হয়ে আছে! আর আমি আবার হারালাম। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গভীরতম ভাষায় প্রাচীনতম বেদনার কথা নিমিষে কোন ফাঁকে জানিয়ে দিলাম, বলতে পারি না।

উড ইয়্যু লাইক টু গেট দ্যট ফ(র) ইয়্যর গার্লফ্রেন্ড, স্যর? আয় ক্যান টেল ইয়্যু ইট’ড বি আ পারফেক্ট ওয়ান ফ(র) হা(র)। সাথে গা-জ্বালানো একটা হাসি ফ্রী।

সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে, খানিকটা কেশে বললাম, ‘আমরা বন্ধু মাত্র, অন্য কিছু নয়’

ইয়াহ, উই ক্যান সী দ্যট ভেরি ওয়েল।

ফাজিল কোথাকার! তাড়াতাড়ি দাম মিটিয়ে দিলাম। ও অনেক আপত্তি করল, কিন্তু অনেক করে বুঝিয়ে রাজী করালাম…উপহার দেয়ার কথা বললাম। ভাবলাম,

“How a silly thing like this
can cry out
my long cherished longing?
I do, I do, I do…
love you for anything;
whatever be the price,
in this dear old world, you and I see.”

 

আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। চট করেই পরিসমাপ্তি টেনে বসবেন না যেন আবার! আমি জানি আপনারা অভিজ্ঞজন; অনেকই জানেন। তবুও বলব, সব ঘটনা সবসময় চিরচেনা অভিজ্ঞতার ঋজু পথে হাঁটে না। আমার ক্ষেত্রেও তা হলো কিনা দেখুনই না?

এইসব ঘটনা কিংবা অঘটন এগুলোর কোনটার জন্যই আমরা হয়তো প্রস্তুত ছিলাম না। বাইরে বেরিয়েই মেয়েটা গম্ভীর হয়ে গেলো-একটু বেশিরকমের গম্ভীর! পাশাপাশি হাঁটছি অথচ কেউ কোনো কথা বলছি না। আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে মৌনতাকেই জায়গা করে দিলাম। অনেক সময় নীরবতা না-বলা কথাগুলোকে বাড়াবাড়ি রকমের অনায়াসে বলে ফেলতে পারে। হঠাত কী হলো জানি না…আচমকা থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ আমায় খুঁটিয়ে দেখে বলল, ‘যিয়াদ, কফি খেতে ইচ্ছে করছে, খাবে আমার সাথে?’ এই সময় আকাশটাও ভেঙ্গে নেমে পড়ল। আমিও কি ভেঙ্গে পড়ছিলাম না?

স্বচ্ছ কাচের ঢাউস জানালা দিয়ে ক্ষয়াটে বিষন্ন আলো ছোট্ট টেবলটাতে মাখামাখি হয়ে পড়ে আছে। আর মুখোমুখি আমরা দু’জন। আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই আলো-আঁধারিতে মেইজিন আর আমি-স্বপ্ন দেখছি না তো? কী একটা অর্ডার করল আমার কানেই গেলো না! আমি আকাশের কান্না দেখছিলাম আর মনে যে কত কিছুর ঝড় বয়ে যাচ্ছে… গাঢ় স্বরে তন্ময়তা ভেঙ্গে গেলো, ‘ শোন, এদিকে তাকাও’

হ্যাঁ, কী বলছিলে? জিজ্ঞাসা করলাম।
আমাকে খুব কঠিন মনে হয়, তাই না?
কেন এ কথা বলছো?
আসলে কেউ আমাকে বুঝতে পারে না। সবাই কেবল বাইরেটাই দেখে। কাজ আর পড়াশুনার চাপে সবার সাথে মিশতে চাইলেও হয়ে ওঠে না। আর একটু ইনট্রোভার্ট…আমার আবেগ-অনুভূতি, ভাললাগাগুলো আমার মধ্যেই থেকে যায়…কেউই বোঝে না…শুধু কেউ কেউ ছাড়া…এই যেমন…

আমি জানি, বললাম।
জান? পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা। একটা কিছু মাপতে চাইছে।
কী একটা বলবো ভাবছিলাম অমনি ওয়েটার মেয়েটি এসে কথার তুফান মেল ছেড়ে দিলো। এবারেও কী বলল কিছুই কানে ঢুকল না। আমি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলাম।

চিন্তায় এলোমেলো থাকলে তোমাকে না বেশ লাগে! ও হেসে ফেললো।
তাই নাকি? ক’বে থেকে দেখলে? আমার চোখের তারায় কৌতুক! আমার আর কী কী ভালোলাগে?
বলব না। কানের কাছে চূর্ন চুলের গোছা পাকাতে পাকাতে চোখ নামিয়ে হাসতে থাকল। আমি আবারও বুকে ব্যথা অনুভব করলাম।
যিয়াদ, শোন…একটু থেমে থেকে বলল, ‘ তোমাকে তো ওর কথা বলাই হয় নি!’
কার কথা বলছো?
ম্যাথিঊ ওর নাম। বড় ভোলাভালা, একদম তোমার মত। যে বছর তুমি অন্য জায়গায় চলে গেলে, সে বছরেই…আমরা ভালো আছি, বিশ্বাস করো।

আমার ভেতরে এবার যেন সত্যিকারের ভাঙ্গনের শব্দ শুনতে পেলাম। বাইরে যে আকাশের কালো, তার থেকেও বেশি বিষাদের কালোয় ঢেকে গেলো আমার নিজস্ব আকাশ! বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম যেন। অর্থহীণ মনে হতে লাগলো সবকিছু। তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলাম। অভিনয়ের মুখোশই যে আমার নিয়তি সেটা আবার বুঝলাম। হাসতে হাসতেই বললাম, ‘ এতো দারুন ব্যাপার, অভিনন্দন তোমাকে! একদিন পরিচয় করিয়ে দেবে তো?’ কফির কাপে কফি জুড়িয়ে যাচ্ছে…কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সহসা ও বলল, ‘আমি, আমি খুব খারাপ মেয়ে। তোমাকে বোধহয় কষ্ট দিয়ে ফেললাম। বলো আমাকে ক্ষমা করে দেবে?’

আমি হেসে ফেললাম। ‘কেন ক্ষমা চাইছো? এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকের আপন একটা গন্ডী হয়েই যায় এবং সবারই নিজ নিজ পরিধি জানা থাকা উচিত। তোমরা ভালো থেকো।‘ এরপর আর কথা বাড়লো না। এই পরিবেশ অসহ্য লাগছে। বাড়ি ফেরা দরকার। তারপর গহীন নিঃশব্দে ডুব।

বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আমার ভেতরেও। ওর ছাতা নেই; ইতস্তত করছে, স্টেশানে যেতে হবে তো। একটানে আমার ছাতার নীচে নিয়ে এলাম। ঝুম বৃষ্টি…ঘন হয়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। এইতো অবাধ্য চুলের গোছা মাড়িয়ে দিচ্ছে আমার নাক। আহ, সুগন্ধ! একটা দেহজ কোমল উত্তাপ উচিত-অনুচিত্যের সংকীর্ণ পথ গলিয়ে আমাকে হয়তো শেষবারের মত পাগল করে দিতে চাইছে! হাত বাড়াতে গিয়েও নামিয়ে নিলাম। পথ মোটেই দীর্ঘ নয়; স্টেশান ঝুপ করে এসে গেলো।

বিদায় বেলা।

এই যে দাঁড়ান। আমার গল্পটা কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায় নি। ট্রেনে তুলে দিতে যাবো তখন মেইজিন একটা আজব কান্ড করে বসল; হঠাত জড়িয়ে ধরে…… থাক সেটা আপনারা নাইবা শুনলেন। একলাফে ট্রেনে উঠে গিয়ে হাত নাড়তে নাড়তে বলল, ‘ বুদ্ধু কোথাকার! ম্যাথিউ বলতে কেউ নেই! আর মানুষ হলে না! আর লুকিয়ে লুকিয়ে স্টেশানে কাউকে দেখাটা মোটেই ভালো কথা নয়! হি হি হি’
যুগপৎ আনন্দ আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ওর হাসিটুকু মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বুকে ধরে রাখলাম। নক নক। মেসেজ এসেছে। ‘ লভ ইয়্যু মোর দ্যান আয় ক্যান সে…’ আর তক্ষুণি নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য হাত কামড়াতে ইচ্ছে হলো- ইস! মেয়েটা ঠিকই দেখেছিলো স্টেশানে কেমন হ্যাংলার মত তাকিয়ে থেকে থেকে স্থাণু হয়ে গেছিলাম! বুক থেকে আলগোছে একটা শ্বাস বেরিয়ে গেলো। এখন আপনারাই বলুন না তাতে দুঃখ, আনন্দ কিংবা স্বস্তি কোনটা ছিলো?

☼সমাপ্ত

একটু কান্নার জন্য

একটু কান্নার জন্য করি আকুতি
যদি ঝরতো জল অঝোরে এক নদী,
মন হালকা হতো।
দেখাতে পারতাম যদি
বুকের চাপা কষ্টগুলো!
কেমন মুখ বুজে সই
যত আঘাত – সংহারি…
মন হালকা হতো।
ভালোবাসতে পারতাম যদি
নিঃশেষ উপেক্ষা,
দিন শেষের মন উথালি-পাথালি…
মন হালকা হতো।
আঁকতে পারতাম যদি
বিস্মৃতির ধোঁয়াশা!
যন্ত্রণার নীলে মিশতো
উদাসীনের ধূসরতা…
মন হালকা হতো।
যদি কাঁদতে পারতাম
এক বুক হাপুস নয়ন –
সমর্পনে নির্বাপন অন্তর্দহন…
মন হালকা হতো!

কিন্তু এ চোখ অশ্রুবিহীন
আঘাতে আঘাতে পাথর – যেন অনুভূতিহীন!
বুক ফাটে তবু চোখ ফাটে না
ভরা বেদনায় রুদ্ধ এ কণ্ঠ
তবুও জল গড়ায় না!

আহ, কাঁদতে পারতাম যদি
দু’কূল ছাপাতো মৌনতায় স্তব্ধ
পাথরের হৃদয় নদী…
মন হালকা হতো!