ক্রায়োজেনিক চেম্বারের স্বচ্ছ ঢাউস জানালা দিয়ে বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে লিঙ্গমুক্ত দুনিয়ার দুই গবেষক – ১২১৩৯৩ এবং ১৯৬৪১৮।নামের প্রচলন বহু আগেই লুপ্ত হয়েছে। সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করাটা সরল এবং কার্যকর। আর সেই সাথে অনেক অনুভূতিও বাতিলের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
অনুভূতির পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা তুলনামূলকভাবে একটি শিশু বিজ্ঞান। কয়েকজন প্রাচীনবাদী সত্তা সহস্র বছরের পুরোনো ধ্যানধারণার পুনর্জাগরণ চান। চরম মিনিমালিস্ট সমাজে এমন চিন্তা স্রেফ পেছনে হাঁটার নামান্তর হলেও তাঁরা থেমে থাকেননি।
এই গবেষণার জন্য অনন্ত ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে দুজন নরনারীকে। লিঙ্গ দিয়ে এভাবে ভেদাভেদ করাটা এখন হাস্যকর এবং কুরুচিকর হলেও ১২১৩৯৩ এবং ১৯৬৪১৮ সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাদের কাছে কাগজ নামক বিলুপ্ত একটা মাধ্যম দিয়ে বেশ কয়েকটা তথ্যভান্ডার এসেছে। প্রাচীন এক লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোকে নাকি বই বলা হতো। অদ্ভুত হেয়ালিপূর্ণ শব্দের সমাবেশ। তাদের মাথায় বসানো জেটাফ্লপ বায়োচিপ বাক্যে শব্দগুলির ব্যবহার বিশ্লেষণ করেছে।পারস্পরিক আকর্ষণজনিত উদ্ভট কথামালা! তবুও গবেষণার খাতিরে ভালোবাসা এবং কবিতা নামক ব্যাপারগুলো হজম করতে হচ্ছে ওদের।
এখন দেখা যাক কী হচ্ছে সেই ক্রায়োজেনিক গবেষণাগারে? ঘুম থেকে জাগানো দুই প্রাচীন নরনারী প্রবল আলিঙ্গনে রত। ছেলেটির কাঁপা কাঁপা আঙ্গুল মেয়েটির ভরাট ঠোঁটের সঙ্গমে। অদ্ভুত সংক্রামক দৃশ্য! এসবের চল উঠে গেছে সহস্র বছর আগে।
কিন্তু হঠাৎ কী হয় বুঝা যায় না! ১২১৩৯৩ নিজের ঠোঁটে অজান্তে হাত দিয়ে ছুঁয়ে ফেলে। কোনো এক বিষম আলোড়নে সে কাঁপছে! ঘাড় ঘুরিয়ে চোখে চোখ রাখে ১৯৬৪১৮। ১২১৩৯৩ কে কাছে টেনে আনে। নিছক অনুকরণই হয়তো!
অনন্য কৃত্রিম প্রাণ ইউ-০ রিপোর্ট লিখল।
সাংঘাতিক ব্যত্যয়! ১২১৩৯৩ এবং ১৯৬৪১৮ কে আশু কোয়ারিন্টিনে নেবার সুপারিশ করা হলো। অভিযোগ গুরুতর। নিষিদ্ধ বাতিল অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলেছে। সত্তার পোলারিটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কীভাবে প্রকাশ পেল, এটি যথেষ্ট কৌতূহলউদ্দীপক হলেও আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণের দাবীদার।
ভালোবাসা এমনই। ব্যত্যয় হয়েও হয়তো বেঁচে থাকবে অনন্তকাল!