দাঁড়ান বলছি। এত তাড়া দিলে কি চলে? ঘটনাগুলি ঝটপট ঘটে গেলো।
চশমা কিনতে যাবে-এ উপলক্ষ্যে যে আমার ডাক পড়বে…কোনোদিনই ভাবি নাই! জীবনে বোধহয় এই প্রথম নাকের কাঁধে পাকাপাকি চেপে বসা দৈত্যটিকে বেশ ভালো লাগতে থাকল। সম্মতি জানাতে গিয়ে প্রায় তোতলা হয়ে গেলাম। হা ঈশ্বর, এসব কী হচ্ছে? মেয়েটি যদি বুঝে যায়? কোনোমতে বললাম: ‘ফ্রাইডে আফটারনুন –এ যাওয়া যেতে পারে’। হ্যাঁ সূচক একটা মাথা নাড়িয়ে মেইজিন চলে গেলো। আমার ভুলও হতে পারে…একটা অস্পষ্ট হাসির রেখা কি ছিল না ওর ঠোঁটে? বুকের কোথায় যেন কিছু একটা ভাংচুর আবার শুরু হল?
এরকমই হয়ে আসছে বেশ ক’টি বছর। হ্যাঁ, আপনারা যা অনুমান করেছেন তাই হয়তো ঠিক। আমি এই মেয়েটিকে একান্ত চাই…অবশ্যি একতরফা…এটাও নিশ্চয় বলে দিতে হবে না! নাকি অন্য কিছু একটা আছে, প্রচন্ড চাপা স্বভাবের মেয়েটিকে বোঝাই দায়…সত্য বলতে গেলে কথাটা আমার জন্যও খাটে বৈকি!
মেইজিন কে প্রথম দেখাতেই ভাললেগে গিয়েছিলো। আমার সহকর্মী ছিল। কিন্তু অনেকদিন পাশাপাশি কাজ করেও ঐ যে আপনারা যেটা ভালো জানেন, সেটা আর বলা হয়ে ওঠে নি। ইনফ্যাক্ট, কেউই বলতে পারে নি। সহজ ব্যবহারের মোড়কে একধরণের দুর্ভেদ্য দেয়াল ছিলো যেটার ভাঙ্গাটা অসম্ভবের নামান্তর ছিল। আপনারা হয়তো বলবেনঃ ‘এ আর এমন কী? ওরকম হয়েই থাকে। তোমার সাহসে কুলোয় নি!’ হবে হয়তো…কিন্তু বুঝতে বুঝতে বিচ্ছেদটা হয়েই গেলো। মনে থেকে গেলেও ব্যস্ততার কারণে আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। সেদিন হঠাত করেই স্টেশানে দেখা হয়ে গেলো। কথায় কথায় জানলাম চোখে ভালো দেখছে না; আমি যদি সময় করে ওকে নিয়ে যাই? আপনারাই বলেন, আমি ওর জন্য সময় বের করতে পারবো না? এও কি হয়? টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়া কী যেন একটা খুঁজছিলাম, নিজেও ভালো জানি না।
তারপর মাঝের দিনগুলি কীভাবে যে কেটে গেলো…ভয়ানক অস্থিরতা…কী পরবো, কী বলব…এইসব হাবিজাবি। একটু হাসিও পেলো। নিজেকে বললামঃ ওহে প্রেমের মরা, শপিং –এ সাহায্য করতে তোমায় ডেকেছে। আর তুমি কিনা…ছিঃ ছিঃ! সে যাই হোক, শুক্রবারের সকাল-দুপুরটা অফিসে যেন কাটতেই চাইছিল না। তার উপর সহকর্মী মহিলা জেমস বন্ড মেয়েটির অনুসন্ধিতসু চোখ নাচানিঃ ‘কি হে! আজকাল দেখতেই পাচ্ছো না বুঝি? তা, মেয়েটি কে শুনি, ওই যে আজ বিকেলে যাওয়ার জন্য হেঁদিয়ে মরছ?’
নিঁখুত অভিনয়ে আকাশ থেকে পড়ে বললাম, ‘ কি যা তা বলছ কারমেন, কোথায় আবার যাব?’
থাক, আর জঘণ্যতম অভিনয় করতে হবে না। ইয়েলো স্টিকি নোট এ নাম আর সময় লিখে মনিটরে সাঁটিয়ে পূজো করছো আর বলছো কিনা কী যা-তা বলছি হা হা হা। সত্যিই তাই তো! ভুলোমনের মাশুল আর কী! জিভ কেটে ২০ মিনিট হাওয়া হয়ে যেতে হলো। নইলে কারমেন কী জিনিস যে বুঝবে সে আজীবন মনে রাখবে।
মোবাইলে নক নক শুনে তাকিয়ে দেখি একটা মেসেজ এসেছে। মেইজিন। সে নাকি আমার জন্য স্টেশানে অপেক্ষায় আছে। হাউ সুইট! তড়িঘড়ি করতে গিয়ে টেবলে হোঁচট খেয়ে গেলাম। অট্টহাসি শুনে কারমেন কে জায়গামত একটা রাম-চিমটির অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
বিশাল স্টেশানে ঘরফেরতা গিজগিজে মানুষের ভীড়ে কাউকে খুঁজে বের করাটা বিরাট ঝামেলার। মোবাইল করা যেতে পারে, কিন্তু করতে ইচ্ছে হলো না। অনুমানের উপর ভিত্তি করে গেইটের বাইরে কস্টা কফি’র আশেপাশে চোখ বুলালাম। আর তাতেই সুন্দরী চোখের ফ্রেমে বন্দী হয়ে গেলো। একধরণের ছেলেমানুষি পেয়ে বসল; প্রতীক্ষায় ওকে কেমন দেখা যায় আর কী! আর সে দৃশ্য…একবার মোবাইল, একবার গেইটে। সুন্দর মুখখানায় বহু আকাঙ্খিত কাউকে স্পট করার শিশুসুলভ চাঞ্চল্য-বিরলই বটে! মনের ভেতর দুর্মুখ আমিটি বলে উঠলোঃ আবে গাধা, চশমা কেনা কীভাবে হবে এই চিন্তায় ব্যাকুল হয়েছে আর তুই কিনা ছিঃ ছিঃ! ‘ইয়্যু’ড নট বিলিইভ ইয়্যর আইজ, ইফ টেন মিলিয়ন ফায়ারফ্লাইস…’ মোবাইলের রিংটোনে সম্বিৎ ফিরে দেখি কল করেছে। আমাকে ওদিকটায় ডাকছে। আমার যা স্বভাব, ভাবনায় হারিয়ে গেলে তো খেয়াল থাকে না..দেখেই ফেললো নাকি?
তুমি বুঝি খুঁজছিলে আমাকে অনেকক্ষণ? আমি তো তোমাকে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।
নাহ, এই এই তো…এইমাত্র এলাম। দাঁড়িয়ে দেখছিলাম-এটা কীভাবে বলি আপনারাই বলুন। কিছু কিছু মিথ্যে সত্যের মত করে বলতে হয় নইলে উপায় নাই। টুকটাক কুশল বিনিময়ের ফাঁকে অপ্টিসিয়ানের কাছে যাচ্ছিলাম। বেশ বুঝতে পাচ্ছিলাম আগের মত স্বচ্ছন্দ আর নেই সে। কেমন আড়ষ্ট হাঁটছে। কিন্তু কেন? আমার উপস্থিতি…তবে কী?
তুমি আগের মতই আছো দেখছি! হুটহাট ভাবনায় ডুবে যাও; একটা এক্সিডেন্ট যে এতদিনে করে বস নি এটাই আশ্চর্য!
তা, এক্সিডেন্ট করলেই কী আর না করলেই কী? কেইবা ভাবছে বলো? এ দুনিয়াতে তো আমার বলার মত কেউ নেই!
সে কী! কেউ জুটেনি এতদিনে?
এখন তো মনে হচ্ছে এক্সিডেন্টে কাঁদবার জন্য হলেও একজন থাকলে মন্দ হতো না…হা হা হা।
মেয়েটিও হাসছে। এত সুন্দর লাজুক হাসি! হঠাৎ বড় শূন্য শূন্য লাগতে থাকলো। বুকের ভেতরে একটা চিনচিনে ব্যথা। সেটা এই হঠাৎ প্রাপ্তিতে নাকি বহুকালের অপ্রাপ্তিতে-ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। এখন আপনারাই বলেন ঐ যে আপনারা কী যেন একটা বলাবলি করছিলেন সেটাই আমাকে পেয়ে বসেছিল কিনা?
চেংড়া অপ্টিসিয়ানটি সময় নিয়ে (একটু বেশিই হবে, আপনারাই বলুন, সহ্য হয়?) ছোটখাট সার্কাস দেখিয়ে একটা প্রেসকৃপশান ধরিয়ে দিল। দেখলাম এমন কিছু নয়; সেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। এখন ফ্রেম দেখার পালা।
এত সুন্দর চোখ তোমার…সেগুলি কিনা এই হতচ্ছাড়াগুলি (চশমা) দু’হাত দিয়ে সারাক্ষণ আগলে রাখবে! উহ! ভাবতে পারছি না!
বুঝলেন আপনারা, জানি না কী ছিল এই কথায়…মেইজিন এতো মজা পেয়ে হাসতে থাকলো যে আশে পাশের কয়েকটা চ্যাংড়া ট্রেইনি এসে অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। কীভাবে তারা সাহায্য করে ওকে ধন্য করবে তাই বলে কান ঝালাপালা করে ফেললে। এমন কটমট করে চাইলাম যার মানে করলে দাঁড়ায়ঃ ‘ ভালো চাস তো কেটে পড় উজবুকের দল’। কীভাবে আমি এই কাজটি করতে পারলাম, সেটা আপনারাই বের করুন।
মেইজিন বলে – তোমার চোখও তো সুন্দর! তবে সেগুলি কেন লুকিয়ে রাখো? (মিটিমিটি হাসি)
আহেম, ইয়ে…সেটাও দেখতে পেয়েছো? আশ্চর্য! আনন্দদায়ক কিন্তু অপ্রস্তুত ভাবটা লুকোতে মেয়েদের একটা ফ্রেমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ফ্রেমটা পরিয়ে দিতে গিয়ে ওর পুরো মুখটা আমার দু’হাতের মধ্যে হঠাত বন্দী হয়ে জমে গেলো। একটা বারংবার না বলা অচেনা আলো গভীর কিছু উপলব্ধিকে সহসা আলোকিত করে দিয়ে বিস্ময়ে যেন থির হয়ে আছে! আর আমি আবার হারালাম। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গভীরতম ভাষায় প্রাচীনতম বেদনার কথা নিমিষে কোন ফাঁকে জানিয়ে দিলাম, বলতে পারি না।
উড ইয়্যু লাইক টু গেট দ্যট ফ(র) ইয়্যর গার্লফ্রেন্ড, স্যর? আয় ক্যান টেল ইয়্যু ইট’ড বি আ পারফেক্ট ওয়ান ফ(র) হা(র)। সাথে গা-জ্বালানো একটা হাসি ফ্রী।
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে, খানিকটা কেশে বললাম, ‘আমরা বন্ধু মাত্র, অন্য কিছু নয়’
ইয়াহ, উই ক্যান সী দ্যট ভেরি ওয়েল।
ফাজিল কোথাকার! তাড়াতাড়ি দাম মিটিয়ে দিলাম। ও অনেক আপত্তি করল, কিন্তু অনেক করে বুঝিয়ে রাজী করালাম…উপহার দেয়ার কথা বললাম। ভাবলাম,
“How a silly thing like this
can cry out
my long cherished longing?
I do, I do, I do…
love you for anything;
whatever be the price,
in this dear old world, you and I see.”
আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। চট করেই পরিসমাপ্তি টেনে বসবেন না যেন আবার! আমি জানি আপনারা অভিজ্ঞজন; অনেকই জানেন। তবুও বলব, সব ঘটনা সবসময় চিরচেনা অভিজ্ঞতার ঋজু পথে হাঁটে না। আমার ক্ষেত্রেও তা হলো কিনা দেখুনই না?
এইসব ঘটনা কিংবা অঘটন এগুলোর কোনটার জন্যই আমরা হয়তো প্রস্তুত ছিলাম না। বাইরে বেরিয়েই মেয়েটা গম্ভীর হয়ে গেলো-একটু বেশিরকমের গম্ভীর! পাশাপাশি হাঁটছি অথচ কেউ কোনো কথা বলছি না। আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে মৌনতাকেই জায়গা করে দিলাম। অনেক সময় নীরবতা না-বলা কথাগুলোকে বাড়াবাড়ি রকমের অনায়াসে বলে ফেলতে পারে। হঠাত কী হলো জানি না…আচমকা থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ আমায় খুঁটিয়ে দেখে বলল, ‘যিয়াদ, কফি খেতে ইচ্ছে করছে, খাবে আমার সাথে?’ এই সময় আকাশটাও ভেঙ্গে নেমে পড়ল। আমিও কি ভেঙ্গে পড়ছিলাম না?
স্বচ্ছ কাচের ঢাউস জানালা দিয়ে ক্ষয়াটে বিষন্ন আলো ছোট্ট টেবলটাতে মাখামাখি হয়ে পড়ে আছে। আর মুখোমুখি আমরা দু’জন। আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই আলো-আঁধারিতে মেইজিন আর আমি-স্বপ্ন দেখছি না তো? কী একটা অর্ডার করল আমার কানেই গেলো না! আমি আকাশের কান্না দেখছিলাম আর মনে যে কত কিছুর ঝড় বয়ে যাচ্ছে… গাঢ় স্বরে তন্ময়তা ভেঙ্গে গেলো, ‘ শোন, এদিকে তাকাও’
হ্যাঁ, কী বলছিলে? জিজ্ঞাসা করলাম।
আমাকে খুব কঠিন মনে হয়, তাই না?
কেন এ কথা বলছো?
আসলে কেউ আমাকে বুঝতে পারে না। সবাই কেবল বাইরেটাই দেখে। কাজ আর পড়াশুনার চাপে সবার সাথে মিশতে চাইলেও হয়ে ওঠে না। আর একটু ইনট্রোভার্ট…আমার আবেগ-অনুভূতি, ভাললাগাগুলো আমার মধ্যেই থেকে যায়…কেউই বোঝে না…শুধু কেউ কেউ ছাড়া…এই যেমন…
আমি জানি, বললাম।
জান? পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা। একটা কিছু মাপতে চাইছে।
কী একটা বলবো ভাবছিলাম অমনি ওয়েটার মেয়েটি এসে কথার তুফান মেল ছেড়ে দিলো। এবারেও কী বলল কিছুই কানে ঢুকল না। আমি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলাম।
চিন্তায় এলোমেলো থাকলে তোমাকে না বেশ লাগে! ও হেসে ফেললো।
তাই নাকি? ক’বে থেকে দেখলে? আমার চোখের তারায় কৌতুক! আমার আর কী কী ভালোলাগে?
বলব না। কানের কাছে চূর্ন চুলের গোছা পাকাতে পাকাতে চোখ নামিয়ে হাসতে থাকল। আমি আবারও বুকে ব্যথা অনুভব করলাম।
যিয়াদ, শোন…একটু থেমে থেকে বলল, ‘ তোমাকে তো ওর কথা বলাই হয় নি!’
কার কথা বলছো?
ম্যাথিঊ ওর নাম। বড় ভোলাভালা, একদম তোমার মত। যে বছর তুমি অন্য জায়গায় চলে গেলে, সে বছরেই…আমরা ভালো আছি, বিশ্বাস করো।
আমার ভেতরে এবার যেন সত্যিকারের ভাঙ্গনের শব্দ শুনতে পেলাম। বাইরে যে আকাশের কালো, তার থেকেও বেশি বিষাদের কালোয় ঢেকে গেলো আমার নিজস্ব আকাশ! বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম যেন। অর্থহীণ মনে হতে লাগলো সবকিছু। তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলাম। অভিনয়ের মুখোশই যে আমার নিয়তি সেটা আবার বুঝলাম। হাসতে হাসতেই বললাম, ‘ এতো দারুন ব্যাপার, অভিনন্দন তোমাকে! একদিন পরিচয় করিয়ে দেবে তো?’ কফির কাপে কফি জুড়িয়ে যাচ্ছে…কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সহসা ও বলল, ‘আমি, আমি খুব খারাপ মেয়ে। তোমাকে বোধহয় কষ্ট দিয়ে ফেললাম। বলো আমাকে ক্ষমা করে দেবে?’
আমি হেসে ফেললাম। ‘কেন ক্ষমা চাইছো? এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকের আপন একটা গন্ডী হয়েই যায় এবং সবারই নিজ নিজ পরিধি জানা থাকা উচিত। তোমরা ভালো থেকো।‘ এরপর আর কথা বাড়লো না। এই পরিবেশ অসহ্য লাগছে। বাড়ি ফেরা দরকার। তারপর গহীন নিঃশব্দে ডুব।
বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আমার ভেতরেও। ওর ছাতা নেই; ইতস্তত করছে, স্টেশানে যেতে হবে তো। একটানে আমার ছাতার নীচে নিয়ে এলাম। ঝুম বৃষ্টি…ঘন হয়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। এইতো অবাধ্য চুলের গোছা মাড়িয়ে দিচ্ছে আমার নাক। আহ, সুগন্ধ! একটা দেহজ কোমল উত্তাপ উচিত-অনুচিত্যের সংকীর্ণ পথ গলিয়ে আমাকে হয়তো শেষবারের মত পাগল করে দিতে চাইছে! হাত বাড়াতে গিয়েও নামিয়ে নিলাম। পথ মোটেই দীর্ঘ নয়; স্টেশান ঝুপ করে এসে গেলো।
বিদায় বেলা।
এই যে দাঁড়ান। আমার গল্পটা কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায় নি। ট্রেনে তুলে দিতে যাবো তখন মেইজিন একটা আজব কান্ড করে বসল; হঠাত জড়িয়ে ধরে…… থাক সেটা আপনারা নাইবা শুনলেন। একলাফে ট্রেনে উঠে গিয়ে হাত নাড়তে নাড়তে বলল, ‘ বুদ্ধু কোথাকার! ম্যাথিউ বলতে কেউ নেই! আর মানুষ হলে না! আর লুকিয়ে লুকিয়ে স্টেশানে কাউকে দেখাটা মোটেই ভালো কথা নয়! হি হি হি’
যুগপৎ আনন্দ আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ওর হাসিটুকু মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বুকে ধরে রাখলাম। নক নক। মেসেজ এসেছে। ‘ লভ ইয়্যু মোর দ্যান আয় ক্যান সে…’ আর তক্ষুণি নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য হাত কামড়াতে ইচ্ছে হলো- ইস! মেয়েটা ঠিকই দেখেছিলো স্টেশানে কেমন হ্যাংলার মত তাকিয়ে থেকে থেকে স্থাণু হয়ে গেছিলাম! বুক থেকে আলগোছে একটা শ্বাস বেরিয়ে গেলো। এখন আপনারাই বলুন না তাতে দুঃখ, আনন্দ কিংবা স্বস্তি কোনটা ছিলো?
☼সমাপ্ত☼