অধরা শব্দের কাছে এক কাব্য-তিয়াসীর প্রার্থনা!

একটা কবিতা লিখবো বলে
কখন থেকে বসে আছি!
একটা শব্দের জাল বুনবো বলে
কখন থেকে কলম ভাঙ্গছি!
শব্দের উদ্ধত অপ্সরারা,
কীসে তোমাদের এত দেমাগ!
কেন তোমাদের এই নিঠুর খেলা
ব্রাত্য এই কবির সঙ্গে?
কেন তোমরা খেলো লুকোচুরি – নিত্যদিন?
কেন আসোনা এই বুকে…
ভুলে গেছ অযুত দিনের নিযুতসম ঋণ?
আমি বিনে কে বোঝে
তোমাদের অবিনাশি অপার যৌবন?
কে হাত বাড়িয়ে বলেঃ
এসো, উড়িয়ে দেই যোগ্য হৃদয়দেশে
তোমাদের অপাপবিদ্ধ মন!
একটা কবিতা লিখবো বলে
কখন থেকে শব্দের পিছে পিছে ঘুরছি…
প্রগলভা শব্দের তরুনীরা,
মিনতি করিঃ আর মিছে ঘুরিও না!
ধরা দাও, এইবার ধরা দাও এ বুকে…
শব্দ বিনে কবির বুক ধু ধু মরুভূমি
কাব্য বিনে কবির খাতা বেদনায় তামাদি!
একটা মনপবনের ঘুড়ি ওড়াবো বলে
কখন থেকে তোমাদের পিছু নিয়েছি…
দোহাই লাগে অপ্সরারা, আমায় তোমাদের
চরণরেখা চুমতে দাও…
তোমাদের ছন্দিল বক্রতা থেকে
ক’টা সুর দিলেইবা
পথের ধূলোয় অবহেলায় লুটিয়ে…
আমি উদাসীন কবি সেটাই নেবো বুক পেতে।
শব্দের লুব্ধক কামিনীরা,
আর আমায় বঞ্চিত করো না।
আমায়, আমায়…
এবার একটা কাব্যের ফুল ছুঁতে দাও!

প্রথম প্রকাশঃ প্রজন্ম ফোরাম (মার্চ ২০১৩)

বোধোদয়!

এমনি করেই হয়তো কেটে যাবে বাকী দিন-রাত্রি
কেউ নড়বো না যেখানে যেমন আছি।
আত্মাভিমানের শিকড় গভীরে গেছে কত…
হৃত সময়ের শব্দ কেউ কি কখনো শুনেছি?

এমনি করেই বয়ে যাবে বহমান জীবন-নদী
শুধুই থাকবো চেয়ে, বলবো না কিছুই!
চোখেই শুধু ছোঁব গহীনের কথকতা – নীরবে,
ধরা দেবো না কেউই – অস্পৃশ্যই থাকবো…
কেউ কি কখনো বুঝেছি?

এমনি করেই হেঁটে যাবে বাকীটা পথ মিছে নির্মোহে।
কেন আসা হলো না কাছে, দীর্ঘ পথের সাথী?
কেন বলা হয়ে ওঠে নাঃ ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি!’
চাপা রোদনে কেবল দুটি অবুঝ হৃদয়ই ভাঙ্গে!

এমনি করেই আর কত কাল, কত কাল
বয়ে যাবে বিনাশী সমান্তরালে?
কেন মিলবে না দুটি বুক উষ্ণতার চাতক আলিঙ্গনে?
এমনি করেই কেটে যাবে যাপ্য যৌবন
আমরা নিশ্চয় বুড়ো হয়ে যাবো একদিন…
তারপর? তারপর……
কী লাভ এই দ্বন্দ্বে, পষ্টতায় নির্বিচারি অস্বীকারে?
আমরা কি একবার হ্যাঁ বলতে পারি না?
কেন মেলে না অযাচ্য সংঘাতি ব্যাকুল দুটি মন?

এমনি করেই কেটে যাবে অনাগত দিন-রাত্রি
একদিন আর সব হয়তো মিটে যাবে…
শুধু আমাদের চাওয়া – দ্বিধার বিচ্ছেদি কাঁটাতারে বাঁধা –
থেকে যাবে অমীমাংসিত!
আর কত বিক্ষত হলে আমাদের বোধোদয় হবে?

প্রথম প্রকাশঃ প্রজন্ম ফোরাম (ফেব্রুয়ারি ২০১৩)

তোমায় পাই নি বলে…

আমি তোমায় পেতে গিয়েও পাই নি
তাই কাউকেও পেতে দেই নি এই আমাকে!
আমি তোমায় ধরতে চেয়েও
কেবল ব্যর্থতাই পেয়েছি।
ছুটে গেছে আকাংখিতের বাড়ানো সেই হাত।
প্রাপ্তির খাতায় তাই নিঃস্বতা
হাসে অপার বেদনার্ত চোখে।
এখন শুধু মন নিয়ে খেলি…
আমি চৌকস খেলোয়াড় হয়ে গেছি।
আজ আমার সকল আগল খোলা
আজ কেবল খেলতেই ভালোবাসি!

আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি।
তাই কোথাও লিখি না মনের ঠিকানা।
খুলে রাখি, হা হা বিষম ঔদাসীন্যে
খুলে রাখি দেহের সকল তালা!
নির্বিবাদে চোখ মুদে থাকি…
আসলে আসুক যত পারে
মৌসুমের সম্ভোগী প্রজাপতি…
করি না পরোয়া!

আমি তোমার নাগাল পাই নি
তাই কাছে থেকেও কেমন থাকি অধরা!
আমি তোমাকে ছুঁতে পারি নি
যদিও বুকে ছিলো শত জনমের তৃষ্ণা!
আমি তোমায় পাই নি
তাই কাউকেও পেতে দেই নি জমানো হৃদয়-মালা।
কত বসন্ত এলো গেলো,

কত কোকিল গান শোনালো…
তবুও মেটে কি হায়

সেই কবেকার পাওয়া বিষম জ্বালা!

আমি তোমায় পাই নি
তাই মন নিয়ে আক্রোশে খেলি।
আলগা খাঁচায় প্রগলভা পাখি পুরে
সৃষ্টিছাড়া আনন্দ খুঁজি!
আমি খেলি, এখন কেবলই খেলি।
আমি খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছি!
আর অভিমানে ঈশ্বরকে দেই নিকৃষ্টতম অভিশাপ।
একটা মনই তো চেয়েছিলাম…
এই কি আমার আজন্মের পাপ!

প্রথম প্রকাশঃ প্রজন্ম ফোরাম (এপ্রিল ২০১৩)