অণুগল্পঃ একটি ফাঁদ এবং মধুর বিড়ম্বনা

ভারী পর্দার ফাঁক গলে সরু নলের মত একটা আলো এসে যাঈদের চোখে-মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বিগত রজনীর সুখাবেশ তখনও যাঈদের কপালে আনমনে এক্কাদোক্কা খেলছিলো। সেখানে এ কী বিড়ম্বনা! বিরক্তির ঢেউ শতভাঁজে কুঞ্চিত চামড়ায় আলোড়ন তুলছে। কিন্তু চোখ যে খুলছে না। না খুলুক। কী আসে যায় তাতে? উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কী একটা মনে করে হালকা হাসির রেখাগুলি ঠোঁটের কোণে আকুলি-বিকুলি করে উঠে। ডানহাতটা অভ্যেস মত বাড়িয়ে দিয়েই কাকে যেন জাপটে ধরতে চাইলো। কিন্তু কেউ নেই –  শূন্য জায়গাটাতে একটা মেয়েলি সুগন্ধ! নাক টেনে শ্বাস নিতে নিতে ঘুম-জড়ানো গলায়, ‘বীথি, এই বীথি। বীথি ডা-র-লি-ন’, কোথায় গেলে?’

বীথি নিত্য দিনের মত সদ্য গোসল সেরে চুলায় পানি চাপিয়েছে। যাঈদের বেড-টিটা না হলে চলেই না। শনশন শব্দে পানি ফুটছে। রোজ রোজ বাসিমুখে ঐ জিনিস গিলে কী যে সুখ, সেটা বীথির মাথায় ঢুকে না। কিন্তু আজ একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেলো। কাল রাতে বড্ড জ্বালিয়েছে! সেটা মনে করাতে ঈষৎ রাঙা হয়ে গেলেও যাঈদকে জব্দ করার একটা রাস্তা খুঁজতে থাকে। যত্ন সহকারে চিনি বিহীন লিকারে ইচ্ছেমতো লাল মরিচ আর এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে দিলো। একটু চেখে দেখতে জিহ্বা ছোয়াতেই – ও বাবা, ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠলো যেন! তবে মনে মনে বেশ একটা তৃপ্তির ভাব জাগল – একদম পারফেক্ট হয়েছে! হাসি আর থামতে চাইছে না – উপচে উপচে পড়ছে যেন।

চায়ের গন্ধে অলস ঘুমটা পালিয়ে গেলো। তবে একটু ঝাঁঝাঁলো গন্ধ কি? দূর, কী সব ভাবছে? খপ করে বীথির হাতটা ধরে নিজের দিকে টানতেই বীথি হা হা করে উঠলো! সাধের বেড-টি পড়ে যাবে যে! পড়ে গেলে খাবে কী?

কেন, তোমাকে খাবো। চোখ পাকিয়ে তাকায় যাঈদ।

এহ, অসভ্য কোথাকার! এখন বসে বসে ঐ বিশ্রী জিনিসটা গেলো।

নাহ, বিশ্রী হবে কেন? তোমার হাতের স্পর্শ যেখানে, সেখানে তো খালি মধু আর মধু। হা হা হা।

(…বাছাধন, বুঝবে একটু পরে। মধুই তো…ঝাল মধু…) মনে মনে হাসতে থাকে বীথি।

কিন্তু অবাক কাণ্ড ঘটছে। প্রায় উদাসীন ভঙ্গীতে চায়ে চুমুক দিয়ে চলেছে যাঈদ। অবাক হয়ে গেলো বীথি। ভুল দেখছে না তো! এত ঝাল লোকটা নিচ্ছে কী করে? গুনে গুনে তিন চামচ শুকনা মরিচের গুড়া দিয়েছে… এই ফলাফল তো কাঙ্খিত না! হঠাত অন্যমনস্ক হওয়াতে খেয়ালই করে নি কখন যাঈদ হাত বাড়িয়ে টান দিয়েছে।

হুড়মুড় করে পড়ে গিয়ে বীথির আশ্রয় ঘটলো যাঈদের বুকে। বীথির ভেজা চুলে শ্যাম্পুর চনমনে গন্ধ! ক’টা চুল যাঈদের মুখে গিয়েও পড়ে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা বটে! তবে, যাঈদ কিন্তু অন্য কাজে ব্যস্ত – চায়ের কাপটা হতে লাল আস্তরণটা তুলে নিয়ে আয়েসে মাখাতে থাকে নিজের ঠোঁটে। তারপর সারপ্রাইজ এন্ড এটাক – এই কৌশলে শত্রুপক্ষ বধ করতে নেমে যায়। হাতিয়ার – একজোড়া আবেগী দস্যু!

আক্রমণ শেষে শত্রুর লম্ফ-ঝম্ফ শুরু হয়ে গেলো। সারা ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বীথি। মুখে যা আসছে তাই বলে চলেছে। টার্গেট – যাঈদ। নিজের ঝাল মধুতে বীথি নিজেই কুপোকাত হয়ে গেলো। অনবরত পানি ঝরছে।

শরবতটা এক চুমুকে শেষ করে তখনও হাফাচ্ছে বীথি। ঝাল এখনও কাটে নাই। পাশে যাঈদ মিটিমিটি হাসছে।

ব্যাডবয়কে বেড-টি না দিয়ে ব্যাড-টি দিতে গেছো! এখন তো ব্যাড-স্কয়ারড হয়ে গেছি। চাপা হাসি হাসতে থাকে যাঈদ। এবার  আর তোমার নিস্তার নাই! এই এলাম বলে…

এই খবর্দার! দূরে থাকো বলছি!

ব্যাডবয়রা কাছে কাছে থাকে আর গুডিরা দূরে দূরে ……

শয়তান, বিচ্ছু!

আত্মসমর্পনের প্রাক্কালে শুধু এই দু’টি শব্দই বের করতে পেরেছিলো বীথি। বাকী সময়ের শব্দগুলি গাঢ়তর আবেগে দ্বৈতকন্ঠের গান হয়ে গেছিলো।

কী, বিশ্বাস হলো না? তাহলে আপনি নিশ্চিত একটা শতভাগ ‘কেঠো’। হা হা হা।

 

সমাপ্ত

প্রথম প্রকাশঃ প্রজন্ম ফোরাম